Monday, November 10, 2014

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘আর্লি ফিল্মস’

"When I look at a painting for sometime I begin to see images beyond the lines on the canvas. In poetry I perceive a pattern arising from the verbal signs, which appears, shifts and dissolves in the mind. When I began to make films, my only desire was to produce those non static images that I had seen behind closed eyes." 
    বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত 

যৌবন থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন বুদ্ধদেব এবং সেই থেকেই কবিতা এবং গান তাঁকে হ্নট করতে থাকে। এবং দুটো থেকেই জন্ম নিতে পারে এক আশ্চর্য ভিসুয়াল। আন্দ্রেই তারকোভস্কি যেমন বলেছিলেন "At its best, cinema comes between music and poetry."  
১৯৭৮ এর প্রথম ছবি দূরত্ব থেকেই বুদ্ধদেব এখনও একটি সৈকতে তাঁর গূঢ় স্বপ্ন নিয়ে যেখানে তাঁর সিনেমার চরিত্রেরা স্বপ্নময় বেঁচে থাকার জন্য একটি ভয়ানক যুদ্ধ চালিয়ে যায় বাস্তবের বিপরীতে আর সেখানেই ফ্যান্টাসি সঙ্গে বোনা হতে থাকে ম্যাজিক রিয়ালিটি ও পরাবাস্তব। একাধিক আলোচনাতেই বুদ্ধদেব স্বীকার করেছেন তিনি সময়ের কাছে দায়বদ্ধ। 
প্রথম হিউম্যানিস্ট ট্রিলজী দূরত্ব(১৯৭৮), গৃহযুদ্ধ (১৯৮২) এবং আন্ধি গলি (১৯৮৪)-তে বিশৃঙ্খলার এবং হতাশা মুখে জটিল আন্ত এবং অতিরিক্ত ব্যক্তিগত মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষা দিয়ে বুদ্ধদেবের যাত্রা শুরু
পরবর্তী দশকে ( ১৯৮৮-১৯৯৮ ) একজন শিল্পীর সৃজনশীলতা, তাঁর আপস , সততা , এবং এই যুগের যোগাযোগের উভয়সঙ্কট কিংবা যোগহীনতা ফেরা (১৯৮৮), বাঘ বাহাদুর (১৯৮৯) এবং চরাচর (১৯৯৩)। একক মানুষের সংগ্রাম, তাঁর জীবনেতিহাসের সূক্ষ্মতা, অনমনীয়তা উঠে আসে তাহাদের কথা (১৯৯২)-তেও। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে উত্তরা (২০০০) জন্য বিশেষ ডিরেক্টর এর পুরস্কার সঙ্গে, চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যে তাঁর তৃতীয় দশকে প্রবেশ। তবে, পরিচালকের এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকা আমি শুধুমাত্র ছুঁয়ে দেখব প্রথম দু দশককেই যাকে এর পর থেকে এই লেখায় আর্লি ফিল্মস ব্লে উল্লেখ করা যেতে পারে।
A Dictionary of Symbols Herbert Read বলেছেন "Man, it has been said, is a symbolising animal." বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর প্রথম দিকের এই সব ছবিতেই তিনি সতর্কতার সঙ্গে প্রচলিত গল্প বলার আঙ্গিককে ব্রাত্য করেছেন তাঁর শিল্পে, দাশগুপ্তর আর্লি ফিল্মস মূলত চিহ্ন নির্ভর প্রায়শই তাই সিনেমার শুরু হয় কোন থীম দিয়ে, কোন ন্যারাটিভ ঘটনার বদলে।
সাধারণত, কেন্দ্রীয় থিম অপেক্ষা খাবারের জন্য নিম অন্নপূর্ণা-য়, কখন প্রেমিকার জন্য কিংবা বিদ্রোহের আশায়, স্বপ্নের জন্য কিংবা লুপ্তপ্রায় কোন আদিম কলার পুনর্বাসনের অভিলাষে।
প্রথম দশকে দাশগুপ্তর প্রায় প্রতিটি ছবিতেই দেখা যাবে লম্বা নির্জন সংকীর্ণ রাস্তা, হয়ত সেখানে লোক একটি বা দুটি কখনও কখনও আমাদের এই স্টিফ্লিং একজিস্টেন্স তার দ্যোতক। পরবর্তী দশকে মনোবিজ্ঞান , মেমরি, উন্মত্ততা , ভ্রান্তিনিরসন , অবসেশন , অনুভূতি , নিঃসঙ্গতা-জনিত নিরাপত্তাহীনতা এবং স্বপ্ন টলটলায়মান, চিত্রানুগ ভূদৃশ্য যা মহৎ mise-en-scene-এ মিশে যায় অবিরত।
ফেরা এবং চরাচর এই দুটি ছবিতেই সাউন্ডট্র্যাকে পাখিদের ডাক, কূজন নির্দেশ দেয় ব্যক্তির সহজাত বিয়োগান্তক নিঃসঙ্গতার চিত্রকে। এই সময়ের বাকি ছবিতে আরেকটি অভ্রান্ত মটিফ হল দরজা (উল্লেখীয়, বুদ্ধদেবের সাম্প্রতিক ছবিগুলোতে মটিফ হিসেবে আরো বেশী করে আসছে জানালা) । ফেরা-তে  অর্ধেক খোলা (বা বদ্ধ) দরজার রূপকে মার সঙ্গে প্রধান চরিত্রের সম্পর্কের সত্যতা বিষয়ে ছেলেটির অজ্ঞতা প্রকাশ পায়। চরাচর-এ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ফিজিক্যাল দরজা লখীন্দরকে নতুন আশার আলো দেখায় যখন তার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার এবড়খেবড়ো রাস্তাগুলোর পরেও সে দেখে একটি বন্ধ দরজাই । আর লাল দরজা (১৯৯৭) ছবিতে বালকটি জীবনের অনেক-কটা দরজা খোলার গুপ্ত মন্ত্র জানত, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে হারিয়ে ফেলল সেই বোধটাকে, বোধের নীচে শুয়ে থাকা একটি অপাবৃত মনকেও । অর্থাৎ, এই চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে "a person in his/her crises, with conflicts, tensions and the loneliness of nonconformity to existing structures. . .man or woman responding and reaching to, as also absorbing and rejecting, their surroundings, and trying to establish a meaningful communication between fellow human beings. They discover their identity through a faith which enables them to dare to dream of finding acceptance one day."
ভূগোল বা জিওগ্রাফি বুদ্ধদেবের শট কাঠামো্র মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে - সুবিশাল ল্যান্ডস্কেপ ব্যেপে মিড-শটে কিছু মানুষের চলে যাওয়া - ক্ষণস্থায়ী সংযোগ, উত্তরণ, শিকড়-এর প্রতি টান, অন্তিম ভালবাসা। উত্তর-আধুনিক রিডীং-এ দাশগুপ্তর সিনেমার সেন্টার রা শিফট করে তাদের অবস্থান, দর্শক একধরনের বিবশবোধে আচ্ছন্ন হন এই আশঙ্কায় যে এক অনিবার্য নিয়তি-পরিণতি আমাদের ধাবিত করছে কারণ এক বিক্রিত পশ্চিমী নির্ভরতায় আমরা ভুলে যেতে চেয়েছি আমদের ইন্ডিজিনাস সংস্কৃতি।
এই সিনেমায় ফ্যান্টাসি সঙ্গে জাক্সটাপোজ হতে থাকে ঘটনা, মটিফ, মিশে যায় স্বপ্ন, বাস্তব, আকুতি। আমাদের গহনের কোন মানুষ হয়ত কখন বিপন্ন হয়, আগামীর অশনি সংকেতে আর বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মত আমরাও বিশ্বাস করতে শুরু করি - "filmmaking is a quest. There are many questions we have to face in life and I am trying to find answers for some in my films... this is a continuous quest."

[Dainik Statesman, 30th Aug, 2014]

ফড়িং ও আমাদের বড় হওয়া

একদা এক শ্রান্ত বালক হরিদাসকে বলেছিল “আচ্ছা হরিদাস, এখানে এত দুঃখ কেন?” তথাপি কলকাতা ভালবাসে কাঞ্চনকে – নিবিড় আলিঙ্গনে এবং তার পরেও জীবনের অভিজ্ঞতা কাঞ্চনকে পরিণত করে না, সে শুধু ফিরে যেতে চায় মায়ের শান্ত কোলের স্নেহচ্ছায়ায়। ‘কামিং অফ এজ’ ধারার ছবি আদতে বাংলা তথা ভারতীয় ছবিতেই বিরল, যেটুকু যা তা অপাপবিদ্ধ নিষ্কলুষ দর্শনে বিশ্বাসী । বিদেশী এই ঘরানার ছবিতে আবশ্যিক নিশ্চয়তায় উন্মোচিত হয় যৌন-চেতনার উন্মেষ । তাই দামাল ভালবাসার ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ শুধুমাত্র ‘ছোটদের ছবি’ই। যৌন ও মৃত্যু চেতনা এই দুই জীবন-রহস্য কাঞ্চনকে বিপন্ন করে না । তাই আমাদের দেশে লেখা হয় না কোন ‘সং-স অফ ইনোসেন্স’ ও ‘সং-স অফ এক্সপিরিয়েন্স’।
ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরির সাম্প্রতিক ছবি ‘ফড়িং' নিঃসন্দেহে মনে পড়ায় উইলিয়াম ব্লেক-কে। ছবি শুরু হয় এক ড্রিম সিকয়েন্সে যেখানে চোদ্দ বছরের ফড়িং ফ্যান্টাসাইজ করে এজ তরুণীর যিনি তাদের টিচার এং তার নাইটফল হয় । অল্প পরেই ফড়িং-এর স্বকথনের সঙ্গী ঈশ্বর মারফত আমরা জানতে পারি ফড়িং আত্মহত্যা করতে চায় হতাশায়, তাহলেই বাবা-মা কে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারা যাবে, ভাবে সে। উত্তরবঙ্গের নিস্তরঙ্গ এক শহরে ফড়িং-এর বাস। এখানে প্রকৃতি উদার , বন্ধু, সহচর। এবং যে সব মানুষ নিরিবিলি অবগাহন খোঁজে তাদের কাছে আশ্রয় ও। এই পরম নিশ্চিন্তির দেশে টিচার দোয়েল মিত্র ছোট্ট নুড়ির মত, প্যাটার্ন ভাঙ্গে এক জায়গায়, প্যাটার্ন তৈরি হয় অন্যত্র। দোয়েলের সাথে ফড়িং-এর ভাবও তাই আপাত টিচার-স্টুডেন্ট এই মামুলি ছক ভেঙ্গে ফেলে, যেখানে ফড়িং লুকিয়ে দোয়েলের অন্তর্বাসের সুবাস নেয়, লুকিয়ে দেখতে থাকে দোয়েলের পায়ের গোছ, অজান্তে হয়ে উঠতে চায় দোয়েলের রক্ষাকর্তা । অন্য বন্ধুদের কাছে দোয়েল যেখানে অব্জেক্ট অফ ডিজায়ার, ফড়িন-এর সেখানেই জয় – দোয়েল তাঁর জীবন ধারণের অঙ্গ। জীবন এক অবিঘ্নিত আনন্দের প্রবহমানতা নয়, জীবন এখানে ফ্যান্টাসির সঙ্গে রিয়ালিটির টানাপোড়েন, টাটকা, জটিল। পরিচালক সারা ছবি জুড়েই অসংখ্য স্টক শট ছড়িয়ে রাখেন সাবটেক্সটের সম্ভাবনা নিয়ে। এর মাঝেই সহসা হারিয়ে যায় জীবনের ছন্দ – জোড়া ঘটনার আকস্মিক অভিঘাতে। দোয়েল হারিয়ে যায়, যেতে চায় বলেই, তার পলিটিকাল স্টান্সের দৌলতে। ফড়িং ও রেস্পন্ড করে সময়ের, তার মনের – যৌন চেতনা অ মৃত্যু নিয়ে রোম্যান্টিকতা মুছে যায়, দোয়েলের খোঁজে কলকাতা আসে সে, দেখা হয়, ছেড়ে আসা হয়, ফিরে আসার কথা বুকের গভীরে নিয়ে। আর এখানেই ফড়িং এক লাফে কাঞ্চনের মনের বয়সকে পিছনে ফেলে দেয়, এত পরেও বাড়ি ফিরে বন্ধু লাট্টু আর মা বাবা-কে দেখে সে বুঝতে পারে গলার কাছটায় কেমন জমাট কষ্ট, তা সে বোঝেনি এতকাল। কিংবা হয়ত ইগ্নোর করেছে সযত্নে।
লাস হলস্ট্রমের ১৯৮৫ র ছবি ‘মাই লাইফ এজ আ ডগ’ এর ইংমারের ছায়া অনেকটা দেখতে পাই ফড়িং-এর মধ্যেও। ইংমারের ধারণা, তাকে এ পৃথিবীতে আনা হয়েছে অনীচ্ছায়, এক দুর্বল মুহূর্তে সে তার মা-কে বলে ফেলে – ‘ওয়াই ডিড ইয়ু নট ওয়ান্ট মি, মা’ । এই ভালবাসাহীনতার সমান্তরালে দাঁড়িয়ে ফড়িং বুঝতে পারে দোয়েলই একমাত্র যে তার সাথে বাহ্যিক ভাল ব্যবহার করে । আর তাই হয়ত ইংমারের মত ফড়িংও মনে মনে ভাবে ‘ইয়ু হ্যাভ টু কম্পেয়ার, ইট কুড বি ওয়ার্স’। বডদের দুনিয়ায় অন্তেবাসী, জীবনযুদ্ধে পরাক্রান্ত, বিভ্রান্ত ফড়িং এখানেই মিশে যেতে থাকে ইংমারের মধ্যে। এবং ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর অবিস্মরণীয় ‘৪০০ ব্লো-জ’ এর আতোঁয়ার সঙ্গেও। ইংমার,আতোঁয়া এবং ফড়িং – কোন সহানুভূতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়না বলেই এরা এত বেশী বাস্তব,জ্যান্ত। আদ্যন্ত ব্যক্তিগত কিন্তু এততসত্বেও হয়ে ওঠে সামগ্রিক আমাদের সবার বেড়ে ওঠার আখ্যান – তাই ‘ফড়িং’এর পোস্টারে লেখা থাকে – “বড়দের ছোটবেলার কাহিনী” , জাক রিভেট তাঁর রিভিয়ুতে যেমন বলেছিলেন ‘৪০০ ব্লো-জ’ নিয়ে – ‘ইন স্পিকিং অফ হিমসেলফ, হি সিমস টু বি স্পিকিং অফ আস’।
পূর্বেই বলেছি এই ছবিতে যৌন উন্মেষ এসেছে সহজভাবেই। একটি ছেলেদের ইস্কুল যেখানে বছর ১৪-১৫ র ছেলেদের আমরা দেখি তাদের জীবনের অলিন্দে আছে স্বপ্ন, স্বপ্নপূরণ, স্বপ্নভঙ্গ – আর এই সব ঘিরে খুব লেটেন্ট-ভাবে রয়েছে এক যৌন আকাঙ্ক্ষা, অবদমিত, রহস্যাবৃত । তাই দোয়েলকে নিয়ে ফড়িং-এর সাথে তাঁর ইস্কুলের বন্ধুদের চলে প্রতিযোগিতা, মৈথুন-ইপ্সা। এবং স্বাভাবিক-ভাবেই এই ফিলিংসে জড়িয়ে আছে পাপবোধ থেকে উৎসারিত ভীতি, অদম্য কৌতূহল ও পরিশেষে কৌতুক। এই পরিপ্রেক্ষিতে মনে পড়ে যায় জিরি মেনজিলের ১৯৬৭ র চেকোস্লাভাকিয়ার দর্পন ‘ক্লোসলি ওয়াচড ট্রেন’ । যদিও মিলোসের বয়স ফড়িং, আতোঁয়া কিংবা ইংমারের চেয়ে অনেকটাই বেশী, তবুও যৌন অভিজ্ঞতার জায়গায় কোথাও যেন এদের মধ্যে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মেনজিলের ছবি যা আপাতভাবে সেক্স-কমেডি হিসেবে শুরু হয় ক্রমশই তা হয়ে উঠতে থাকে নাজী অধিকৃত বাসভূমির জন্য হতাশা, ক্ষোভ ও হাহাকার। এবং সেটা অচিরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের পুর্ব-ইউরোপের সামগ্রিক রূপ আমাদের সামনে তুলে ধরে – চরম একাকীত্ব ও সংযোগহীনতা । ‘ফড়িং’এও আমরা সেভাবেই একটা ক্ষীণ পলিটিকাল স্টেটমেন্ট পাই যখন দেখি উত্তরবঙ্গের এই সামান্য শহরটির একমাত্র কারখানাও লক-আউটে বন্ধ এবং তজ্জনিত কারণে একটা শ্রম-সক্ষম শ্রেণী কিভাবে আস্তে আস্তে নিশ্চেষ্ট, নিষ্ক্রিয় – তার প্রভাব পড়ছে ফড়িং-দের প্রজন্মের ওপর। আর তাকে ঘিরে রয়েছে উত্তরবঙ্গ তথা সারা ভারত জুড়ে এক বিপ্লবের আগুন যার আঁচ পায় ফড়িং। ফড়িং-এর বয়স-সন্ধি তাই অপাবৃত আনন্দের অবগাহন নয়, শরীর ঘিরে যে শঙ্কা, আন্সারটেইনিটি তা বিস্তৃত হয় সমাজ, প্রকৃতি ও ভালবাসার মধ্যে ও। আর তাই এই ‘কামিং অফ এজ’ শুধু মাত্র ফড়িং-এর নয়, এ আমাদের সমাজব্যবস্থারও, আমাদের রাজনৈতিক চেতনার, জাতি হিশেবে আমাদের সামগ্রিক মূল্যায়ণ এবং স্ট্যান্ডিং। এক কলকাতা-কেন্দ্রিক অশ্লীল একজিস্টেন্স এবং একজিবিশন যা আমাদের চুড়ান্ত পশ্চাৎগামীই করে তুলেছে গত অনেক-কটা দশক ধরে। আর সেকারণেই ‘ফড়িং’ শুধুমাত্র বড়দের ছোটবেলার নস্টালজিয়া হয়ে থাকে না, হয়ে ওঠে ছোটদের সতর্ক হয়ে ওঠার আখ্যান ও।

নিজস্ব আলোকেই ভারতীয় ছবির বিশ্লেষণ কাম্য

['একক মাত্রা'-য় (পঞ্চদশ বর্ষ, তৃতীয়  সংখ্যা,নভেম্বর ২০১৪) প্রকাশিত | নীচের লেখাটি মূল লেখা, পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি এর থেকে কিছুটা সম্পাদিত ]

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পণ্ডিত মাধব প্রসাদ ভারতীয় ও হলিউড সিনেমার বিভাজন উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে ভারতীয় সিনেমা ভিন্নধর্মী হেটেরজিনিযাস উত্পাদনের নমুনা ও হলিউড সিনেমা সিরিয়াল উত্পাদনের ফর্ম মেনেই। হলিউড সিনেমার  কেন্দ্রে অবস্থান করে 'গল্প' যা অনেকক্ষেত্রেই 'বাস্তববাদী' এবং এর ফলে দর্শকদের আইডেনটিফিকশনের সম্ভাবনা বেশি এবং তা স্বয়ংক্রিয় হয় । প্রফেসর প্রসাদের মত মেনে ভারতীয় 'বাণিজ্যিক' সিনেমা, ('সমান্তরাল'/'আর্ট' ফিল্ম রীতির থেকে 'বাণিজ্যিক' ভিন্নতা মোটামুটি বুঝি এটা ধরে নিলে) আসলে একটি সমন্বয় - একাধিক নাচ-গান সিকোয়েন্স, গল্প, যুদ্ধ/প্রতিহিংসা, মেলোড্রামা এবং তারকা । ফিল্মের সাফল্য এইসব একাধিক 'চাক্ষুষ (এবং শ্রবণেন্দ্রিয় সংক্রান্ত) আনন্দ'-এর কারনেই, কোনো একটির উপর নির্ভর করে নয় । পশ্চিমী দর্শকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য 'ক্লাসিকাল ভয়ার দৃষ্টি' বা 'গেজ' (gaze) তাই ভারতীয় দর্শকের ক্ষেত্রে বেমানান কারন তাঁর 'দৃষ্টি' বিভিন্ন উপ-কনটেক্সট দ্বারা ক্রমাগত ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হতে হতে সাবভার্টেড হয় । তাই, ভারতীয় বাণিজ্যিক মূলধারার সিনেমা 'বাস্তবতা' থেকে ভিন্ন 'গীতিনাটক', এর মেলোড্রামায় নিহিত আছে এক অবাস্তব ইচ্ছা-সিদ্ধি - যা দর্শক জানেন আর সেটা জেনেই তিনি ছবিটির কাছে নিজেকে সমর্পন করেন।
আন্তর্জাতিক স্তরে ফিল্ম পণ্ডিতদের একাংশ অনেকদিন ধরেই হলিউডি ছবির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তুলে ধরতে চেয়েছেন 'জাতীয়' ছবি কে । হলিউডের স্টুডিও সিস্টেম যা তাদের সাফল্যের বড় উদাহরন , তাকে নস্যাত করে জাতীয় ছবির প্রয়োজন থেকেই জন্ম নেয় নুভেল ভাগ থেকে আরম্ভ করে আরও অনেক সিনেমা আন্দোলনের । আর এই যুদ্ধের মূল চালিকা ছিল সিনেমা একটি 'শিল্প' মাধ্যম নাকি শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক পণ্য যাকে খুচরো সুপারমলে কিনতে পাওয়া যাবে পকেটে পয়সা থাকলেই - এই আপাত দ্বন্দ।  বিশ্ব চলচ্চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে  সাংস্কৃতিক নির্দিষ্টতার প্যারাডিমে যেকোনো দেশের চলচ্চিত্রেই 'জাতীয়' র পাশেই অবস্থিত আছে একাধিক 'স্থানীয়' ধারা।  অর্থাত হলিউড কে ধরলে এই হায়ারার্কি অনেকটা হলিউড -> জাতীয় ছবি -> স্থানীয় ছবি।  ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যা আরো জটিল কারন এই স্থানিক ধারার সংখ্যা সাধারন ভাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশী। ভারত তার বৈচিত্র্য সঙ্গে নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম সিনেমা উৎপাদনকরি দেশ - ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের বিবিধতায় একটি 'জাতীয়' সিনেমা সংজ্ঞায়িত করা প্রকৃতপক্ষে একটি চ্যালেঞ্জ । আর সেই সমস্যা বেড়ে যায় যখন মিডিয়ার একটা বড় অংশ এবং অনেকক্ষেত্রে সরকারী প্রচারেও 'ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্রের' হিসাবে হিন্দি 'বলিউড' সিনেমা চিহ্নিত করার একটা অসুস্থ প্রয়াস দেখা যায় । দক্ষিণ মূলধারার ছবির রাজস্ব বলিউড ছায়াছবির তুলনীয় আর সেই যুক্তিতে 'জাতীয় সিনেমা' র তকমা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ওপরেও অর্পিত হতে পারত । আরেকটু গভীরে গেলে বোঝা যাবে এই নিয়ন্ত্রন আসছে এক সরকারী অনুশাসন থেকে যেখানে দিল্লির রাজনৈতিক পরিমন্ডল চালিত হয় মূলত উত্তর ও মধ্য ভারতের হিন্দি-ভাষী প্রতিনিধিদের দ্বারা ।
দক্ষিণ (তামিল, তেলেগু, কন্নড় এবং মালয়ালি) জনপ্রিয় মূলধারার সিনেমা, পশ্চিম (মারাঠী এবং গুজরাটি সিনেমা) এবং পূর্ব (বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া) আইনসঙ্গতভাবে 'ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্রের' আওতায় বলিউডের সঙ্গে এরাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে । আর এই 'মূলধারার বাণিজ্যিক' ছবির পাশে এখন ও সক্রিয়  'বিকল্প' ছবি (যদিও বলিউডের ছবিতে এই দুই ধারার পার্থক্য ক্রমশ কমে আসছে) । এই ভিন্নতার কারনেই ভারতীয় সিনেমার কমন ডিক্সন অফ এক্সপ্রেসন জটিল - আমাদের 'ভারতবর্ষ '-এর ভিতরেই লুকিয়ে আছে আরো অনেক গুলো দেশ, এবং সেই বিভিন্নতা ভৌগলিক, সামাজিক, ভাষাগত এবং অর্থনৈতিক । এখানে স্বীকার করা যেতে পারে যে এই কমন ভিউয়ার একস্পিরিয়েনস অনেকটাই আসে হিন্দি ছবি তে - হিন্দি ভাষার সার্বিক গম্যতার কারনে , 'জাতীয়' স্টারদের নিয়োগে, সাধারন ভারতীয় সেন্টিমেন্ট মেনে বিদেশের অথবা দেশাত্মবাদী পটভূমিকায় এবং সর্বপরি এক রোম্যান্টিক আবহে যার জাঁক-জমক অনেকক্ষেত্রেই আঞ্চলিক সনাক্তকরনকে ইচ্ছাকৃত ভাবে সরিয়ে রাখতে সফল হয় ।
দুর্ভাগ্য-বশত:, আমাদের দেশের গরিষ্ঠ সংস্কৃতি গবেষণায় তত্ত্ব আধিক্য সমৃদ্ধিশালী পশ্চিমের নান্দনিক মান দ্বারা প্রভাবিত এবং পরিচালিত হয়েছে । ফিল্ম-আন্দোলনের প্রারম্ভ থেকেই ভারতবর্ষে চলচ্চিত্র সমালোচক মূলত পশ্চিমী ধ্যান-ধারনা কে আত্মীকরণের চেষ্টায় ব্রতী থেকেছে, পাশ্চাত্য তত্ত্ব দ্বারা 'আলোকপ্রাপ্ত' হওয়াকেই শ্রেয় মনে করেছে । এর ফলে বিদেশী তত্ত্বকে দেশী সংস্কৃতিতে মেলাতে গিয়ে বিফল হওয়া মাত্রেই দেশ-জাত সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা ঘনীভূত হয়েছে । এই বোধ (কিংবা বোধ-হীনতা) থেকেই জন্ম নেয় এই মতবাদ যে 'জনপ্রিয়' মাত্রেই 'অসংস্কৃত' । এর ফলে বানিজ্যিক ধারার ছবির কুটোটিও নাড়া যায়নি কিন্তু । বরঞ্চ ,ভারতীয় উপ-মহাদেশকে সুবৃহত সম্ভাব্য বাজার হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলো হঠাত ভারতীয় বানিজ্যিক ছবি এবং জনপ্রিয় তারকাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠেছে ।
আমাদের দেশের চলচ্চিত্র চর্চা তাহলে কোন সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে? প্রয়োজন স্ব-বিশ্বাস, নিজের সংস্কৃতির প্রতি আস্থা এবং নিজেদের বিভিন্নতা কে মর্যাদা দেওয়া ।এইটা বাস্তব যে প্রেমের দৃশ্যে রাস্তায় একশ জন মানুষ নাচ করে প্রেম নিবেদন করেন না যেমন অধিকাংশ ভারতীয় বানিজ্যিক ছবিতে দেখা যায় , ঠিক যেভাবে হলিউডি 'অবতার' ও কোন পার্থিব বাস্তবতা নয় এবং 'স্পিড' কিম্বা তার সিকোয়েলগুলো ও নয় । কিন্তু মাথায় রাখার সময় এসেছে যে শুধুমাত্র 'বাস্তবতা'র দোহাই সিনেমায় অপ্রাসঙ্গিক - সিনেমা ফ্যান্টাসি, সিনেমা স্বপ্ন, সিনেমা বাস্তবের 'বিভ্রম', বাস্তব নয়, আর সেকারনেই তার প্রধান উদ্দেশ্য শব্দটির সব সম্ভব কনোটেশন নিয়েই  'মনোরঞ্জন' । তাই ভারতীয় সিনেমার চর্চা ভারতীয় সিনেমাকে ধরেই করতে হবে, বিদেশী, ধার করা তত্ত্বের নিরিখে নয় - গর্ব ও নিষ্ঠা দিয়ে। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র দার্শনিক গাস্ত রোবের্জ ভারতীয় চলচ্চিত্র থিওরির প্রসঙ্গে স্পষ্ট বলেছেন -“We need a fresh film theory. It is only when we shall define the popular cinema, not in terms of what we would like it to be but in terms of what it actually is, that we shall be able to discern the good from the bad among the popular films…What we need now most urgently is a new theory – or if you wish a new vision”.
শাস্ত্রীয় পশ্চিমী চলচ্চিত্র তত্ত্বের আদিম ফোকাস 'gaze' এবং 'spectatorship' ধারণায় ।এর সঙ্গে যুক্ত হয় লিঙ্গ-ধারনা এবং জন্ম নেয় 'ভয়ার' তত্ত্ব । ভারতীয় প্রেক্ষাপটে নারী শরীরের পাবলিক এক্সপোজার পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে ভিন্ন (গ্রামীণ ভারতে যেমন স্নানরতা নারী কোন ভয়ার বিষয় নয় , তা পরিপ্রেক্ষিতে সাধারন ঘটনা মাত্র)। তাই ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিনির্মানে প্রয়োজন মাটির শিকড় থেকে তাদের বিশ্লেষণ, কয়েক সাধারণ, গ্রাহ্য কাঠামো তৈরি করে নিয়ে । সেই কাঠামো দিয়ে সব আঙ্গিকের ভারতীয় ছবি বিশ্লেষিত না হতে পারে - কিন্তু আরম্ভটা শুরু হওয়া দরকার - কাঠামোকে সময়ের সঙ্গে উন্নত করে যাওয়া, প্রয়োজনে নতুন কাঠামো তৈরী করা সেই মনোভাব নিয়েই ।পাশ্চাত্য তত্ত্ব আলোকে ভারতীয় সিনেমা চর্চা আমাদের ক্রমান্বয়ে সংশয়ী করে তুলেছে, আমরা ভাবতে বাধ্য হয়েছি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় নিকৃষ্ট । এই নতুন দৃষ্টি বিকাশ একটি কঠিন বিষয়, এবং সেই কাজে এগিয়ে আসতে হবে - ফিল্ম সমালোচক, ফিল্ম পরিচালক, ফিল্ম টেকনিশিয়্ন, ফিল্ম প্রযোজক এবং ফিল্ম দর্শক - সবাইকেই ।

The cinema of Buddhadeb Dasgupta



[Published in Deep Focus Cinema, Sept - Nov 2014 Issue (Vol II - Issue III)

Buddhadeb Dasgupta is an Indian film-maker who had left his mark on the international scene with his first feature film Dooratwa way back in 1978. Since then with more than 15 feature films to his credit (and almost equal number of documentaries), Buddhadeb has garnered his place in the history of Indian cinema. As far as National awards and international recognition is concerned, he is probably second to the towering Satyajit Ray whose narrative style Dasgupta have consciously abandoned in lieu of a more surreal, poetic vision of the moving images. On the occasion of his 70th birthday in 2014, Federation of Film Societies of India, Kolkata chapter has published a collection of articles on and by Dasgupta in commemoration – The Poet of Celluloid.
The book is divided into five sections viz. ‘Discourse’ (analytical writings on his cinema and the prevalent motifs and visuals), ‘Dialogue’(Interviews), ‘First Person’ (articles by Buddhadeb Dasgupta), ‘Critique’ (Review of his feature films) and finally ‘Dossier’ for information about his various creative output.
Buddhadeb started off his journey with the examination of complex inter- and extra-personal psychology in the face of chaos and despair in his "humanist" trilogy—Dooratwa (Distance, 1978), Grihayuddha (Crossroads, 1982), and Andhi Gali (Cul-de-Sac, 1984). The next decade (1988-1998) led him to poignantly depict the crisis engulfing the creativity of an artist, his dilemma of compromise, integrity, and non-communication in the stylistic films of this era: Fera (The Return, 1988), Bagh Bahdur (Tiger Man, 1989), Charachar (The Shelter of Wings, 1993). With the Special Director's award for Uttara (2000) at the Venice Film Festival, his third decade in filmmaking commenced. Generally, the central theme of the early films of Dagupta has always been "waiting"—for food in Neem Annapurna (Bitter Morsel), or for the lover, for revolt, for dreams, and for the coming into existence of primitive art forms. In all of Dasgupta's films of the first decade, long narrow lanes populated by solitary figures were used as a motif signifying the stifling world in which we live. His next decade of films dealt with the loneliness of human beings in the magnificent mise-en-scene of the picturesque landscapes, coping with the staggering melange of human psychology—memory, alienation, disillusionment, obsessions, perceptions, insecurities, and dreams. The other motif that appears repeatedly in almost all of Dasgupta's films and mesmerizes us with its intrinsic power to communicate are ‘doors’. The half-closed door in Fera symbolizes the ignorance of a child towards the relationship between his mother and the central character. In Charachar, the fully open door brings new hope to the bird catcher, after the door leading to his wife finally closed itself to him. And in Lal Darja, the child could open a number of doors with his magic chant, something that he failed to open upon growing up. In a postmodern reading, Dasgupta's films shift their centers and bring a sense of an inevitable, impending doom emerging from the curse called "modern India" whose indigenous culture is mutilated and subjugated by a false sense of Western dependency.
In the ‘Discourse’ section Gowri Ramnarayan’s article ‘Verses in Celluloid: Buddhadeb Dasgupta and his works’ deserve special mention for being a good read and putting forth an analytical take on Dasgupta’s early films till the article was written in 1993. Equally thought-provoking is John W Hood’s ‘The Poet as Filmmaker’ where the writer draws the essential nuances and the differences between poetry and cinema and how often interchangeably we misuse the two. Hood elaborates the ‘salient poetical features of Buddhadeb’s films’ – “…as in poetry, the best images are effected with an economy of language; the presentation of image and idea must bear meticulous attention to the proper relationship with form; and the piece must have a clear integrity which accommodates the emotions as much as the mind…But we should also consider in this context the substance of his cinema, its values and predominant ideas, which are more akin to the interest of a poet than, say, a social realist”. Another interesting observation in the same article draws in the inevitability of a Ray legacy – “A major aspect of the legacy of Satyajit Ray is the importance of narrative and the facilitation of empathy with its setting, something basic to all of Ray’s films. And as long as Ray is held in an almost universal esteem bordering on hagiography, his way of making films is held by many to be the model for good cinema. This is not being critical of Ray; it is merely to give an example of another kind of cinema, a distinction which many cinema viewers and critics throughout the world are slow to recognize”. However from Swapner Din (Chased by Dreams, 2004) probably there is a lull in the interest within and outside on Dasgupta’s films. It is no wonder hence that the ‘Discourse’ section deals with critical essays on the director’s oeuvre which doesn’t touch upon any of his recent films made in the last 10 years or so. One reason may be because most of the articles were written quite sometime back. The collection could have taken the task to reflect on Dasgupta’s entire gamut by having critical essays on his films till date – the patterns, deviations and the paths lost in oblivion. That extra duty in a commemorative collection is unfortunately missed sorely and probably that is why there is no article which dealt with a plethora of documentary films which Dasgupta made as well. In today’s world of cinema where Documentary is slowly becoming a very important parallel to the so-called feature films this omission which probably not intentional and largely out of ignorance is not going to miss the eye. Critical questions as to why Buddhadeb has not made almost any Documentary since 2004 could have been raised here to understand the state of the creator’s mind and the inclination of his future creative pursuits.
Aruna Vasudev and Geeti Sen’s interviews are intriguing, dealing again with the early aspects of Buddhadeb’s works. Geeti Sen’s in particular has the interesting reference of the Films Division documentary of Dasgupta – The painter of eloquent silence on the legendary painter Ganesh Pyne.  Dasgupta’s vision towards other arts and the visual image as well as the interchanges between them is evident there. However the same interview is plagued with a basic problem where at several places the interviewer talks more than the interviewee, thereby failing to elicit insightful views from the director. Vishal Verma’s recent interview is important since it gives an aspect of Dasgupta’s philosophy of making the Indian cinema popular in the Western festival circuits as he rightly laments – “Biggest problem with Indian cinema is that it has never become a brand like Chinese cinema, Iranian cinema or lately Korean cinema. Indians were never been able to brand their films like them. Independent makers like Ray, Ghatak they attracted the audience”.
Dasgupta’s own philosophy on life and art which is replicated in the interviews also makes an engaging read in his own essays viz. ‘Enduring Images’ and ‘The world is our stage’. The ‘Critique’ section is pithy – Dhruba Gupta’s take on Grihayuddha, Gaston Roberge’s on Uttara and Amit Agarwal’s parallel between Neem Annapurna and Satyajit Ray’s Pather Panchali deserve special mention.
This is a book which is produced by the Films Division – the supposed nurturer of ‘good’ cinema in India. That they have taken pain to bring out this book deserves applause. However, the collection is based on originally published articles elsewhere – so the pain if any in bringing out this collection is in gathering the articles from different sources. The editorial team could have given notice in making the production of International standards. There are no stills from the different films, the Dossier is incomplete with respect to the details of the films (only the names and year cease to be enough in today’s information-intensive world) which Dasgupta has made, the quality of printing and the quality of paper all deserve a hike and not the least the shape and the size of the book on a ‘different’ film-maker is too clichéd. The collection could have been a product that can be marketed to the world – a book on a film director whom the editor feels dons world standards. Keeping the price of the book low at 150 INR/5 USD and then catering a sub-standard production belittles the cause. This is probably not just a minor blemish but reflects the vision of the producers of the book, who unfortunately don’t hold the same ‘poetic’ vision of the subject they dealt with here.