"When
I look at a painting for sometime I begin to see images beyond the
lines on the canvas. In poetry I perceive a pattern arising from the
verbal signs, which appears, shifts and dissolves in the mind. When I
began to make films, my only desire was to produce those non static
images that I had seen behind closed eyes."
— বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
যৌবন থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন বুদ্ধদেব এবং সেই থেকেই কবিতা এবং গান তাঁকে হ্নট করতে থাকে। এবং দুটো থেকেই জন্ম নিতে পারে এক আশ্চর্য ভিসুয়াল। আন্দ্রেই তারকোভস্কি যেমন বলেছিলেন "At its best, cinema comes between music and poetry."
১৯৭৮ এর প্রথম ছবি দূরত্ব থেকেই বুদ্ধদেব এখনও একটি সৈকতে তাঁর গূঢ় স্বপ্ন নিয়ে যেখানে তাঁর সিনেমার চরিত্রেরা স্বপ্নময় বেঁচে থাকার জন্য একটি ভয়ানক যুদ্ধ চালিয়ে যায় বাস্তবের বিপরীতে – আর সেখানেই ফ্যান্টাসি সঙ্গে বোনা হতে থাকে ম্যাজিক রিয়ালিটি ও পরাবাস্তব। একাধিক আলোচনাতেই বুদ্ধদেব স্বীকার করেছেন তিনি সময়ের কাছে দায়বদ্ধ।
প্রথম ‘হিউম্যানিস্ট’ ট্রিলজী – দূরত্ব(১৯৭৮), গৃহযুদ্ধ (১৯৮২) এবং আন্ধি গলি (১৯৮৪)-তে বিশৃঙ্খলার এবং হতাশা মুখে জটিল আন্তঃ এবং অতিরিক্ত ব্যক্তিগত মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষা দিয়ে বুদ্ধদেবের যাত্রা শুরু ।
পরবর্তী দশকে ( ১৯৮৮-১৯৯৮ ) একজন শিল্পীর সৃজনশীলতা, তাঁর আপস , সততা , এবং এই যুগের যোগাযোগের উভয়সঙ্কট কিংবা যোগহীনতা – ফেরা (১৯৮৮), বাঘ বাহাদুর (১৯৮৯) এবং চরাচর (১৯৯৩)। একক মানুষের সংগ্রাম, তাঁর জীবনেতিহাসের সূক্ষ্মতা, অনমনীয়তা উঠে আসে তাহাদের কথা (১৯৯২)-তেও। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে উত্তরা (২০০০) জন্য বিশেষ ডিরেক্টর এর পুরস্কার সঙ্গে, চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যে তাঁর তৃতীয় দশকে প্রবেশ। তবে, পরিচালকের এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় আমি শুধুমাত্র ছুঁয়ে দেখব প্রথম দু দশককেই যাকে এর পর থেকে এই লেখায় ‘আর্লি ফিল্মস’ ব্লে উল্লেখ করা যেতে পারে।
A Dictionary of Symbols এ Herbert Read বলেছেন – "Man, it has been said, is a symbolising animal." বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর প্রথম দিকের এই সব ছবিতেই তিনি সতর্কতার সঙ্গে প্রচলিত গল্প বলার আঙ্গিককে ব্রাত্য করেছেন তাঁর শিল্পে, দাশগুপ্তর আর্লি ফিল্মস মূলত চিহ্ন নির্ভর – প্রায়শই তাই সিনেমার শুরু হয় কোন থীম দিয়ে, কোন ন্যারাটিভ ঘটনার বদলে।
সাধারণত, কেন্দ্রীয় থিম ‘অপেক্ষা’ – খাবারের জন্য নিম অন্নপূর্ণা-য়, কখন প্রেমিকার জন্য কিংবা বিদ্রোহের আশায়, স্বপ্নের জন্য কিংবা লুপ্তপ্রায় কোন আদিম কলার পুনর্বাসনের অভিলাষে।
প্রথম দশকে দাশগুপ্তর প্রায় প্রতিটি ছবিতেই দেখা যাবে লম্বা নির্জন সংকীর্ণ রাস্তা, হয়ত সেখানে লোক একটি বা দুটি কখনও কখনও – আমাদের এই স্টিফ্লিং একজিস্টেন্স তার দ্যোতক। পরবর্তী দশকে মনোবিজ্ঞান , মেমরি, উন্মত্ততা , ভ্রান্তিনিরসন , অবসেশন , অনুভূতি , নিঃসঙ্গতা-জনিত নিরাপত্তাহীনতা এবং স্বপ্ন টলটলায়মান, চিত্রানুগ ভূদৃশ্য যা মহৎ mise-en-scene-এ মিশে যায় অবিরত।
ফেরা এবং চরাচর – এই দুটি ছবিতেই সাউন্ডট্র্যাকে পাখিদের ডাক, কূজন নির্দেশ দেয় ব্যক্তির সহজাত বিয়োগান্তক নিঃসঙ্গতার চিত্রকে। এই সময়ের বাকি ছবিতে আরেকটি অভ্রান্ত মটিফ হল ‘দরজা’ (উল্লেখীয়, বুদ্ধদেবের সাম্প্রতিক ছবিগুলোতে মটিফ হিসেবে আরো বেশী করে আসছে ‘জানালা’) । ফেরা-তে অর্ধেক খোলা (বা বদ্ধ) দরজার রূপকে মার সঙ্গে প্রধান চরিত্রের সম্পর্কের সত্যতা বিষয়ে ছেলেটির অজ্ঞতা প্রকাশ পায়। চরাচর-এ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ফিজিক্যাল দরজা লখীন্দরকে নতুন আশার আলো দেখায় যখন তার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার এবড়খেবড়ো রাস্তাগুলোর পরেও সে দেখে একটি বন্ধ দরজাই । আর লাল দরজা (১৯৯৭) ছবিতে বালকটি জীবনের অনেক-কটা দরজা খোলার গুপ্ত মন্ত্র জানত, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে হারিয়ে ফেলল সেই বোধটাকে, বোধের নীচে শুয়ে থাকা একটি অপাবৃত মনকেও । অর্থাৎ, এই চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে "a person in his/her crises, with conflicts, tensions and the loneliness of nonconformity to existing structures. . .man or woman responding and reaching to, as also absorbing and rejecting, their surroundings, and trying to establish a meaningful communication between fellow human beings. They discover their identity through a faith which enables them to dare to dream of finding acceptance one day."
ভূগোল বা জিওগ্রাফি বুদ্ধদেবের শট কাঠামো্র মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে - সুবিশাল ল্যান্ডস্কেপ ব্যেপে মিড-শটে কিছু মানুষের চলে যাওয়া - ক্ষণস্থায়ী সংযোগ, উত্তরণ, ‘শিকড়’-এর প্রতি টান, অন্তিম ভালবাসা। উত্তর-আধুনিক রিডীং-এ দাশগুপ্তর সিনেমার ‘সেন্টার’ রা শিফট করে তাদের অবস্থান, দর্শক একধরনের বিবশবোধে আচ্ছন্ন হন এই আশঙ্কায় যে এক অনিবার্য নিয়তি-পরিণতি আমাদের ধাবিত করছে কারণ এক বিক্রিত পশ্চিমী নির্ভরতায় আমরা ভুলে যেতে চেয়েছি আমদের ইন্ডিজিনাস সংস্কৃতি।
এই সিনেমায় ফ্যান্টাসির সঙ্গে জাক্সটাপোজ হতে থাকে ঘটনা, মটিফ, মিশে যায় স্বপ্ন, বাস্তব, আকুতি। আমাদের গহনের কোন মানুষ হয়ত কখন বিপন্ন হয়, আগামীর অশনি সংকেতে আর বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মত আমরাও বিশ্বাস করতে শুরু করি - "filmmaking is a quest. There are many questions we have to face in life and I am trying to find answers for some in my films... this is a continuous quest."
[Dainik Statesman, 30th Aug, 2014]
— বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
যৌবন থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন বুদ্ধদেব এবং সেই থেকেই কবিতা এবং গান তাঁকে হ্নট করতে থাকে। এবং দুটো থেকেই জন্ম নিতে পারে এক আশ্চর্য ভিসুয়াল। আন্দ্রেই তারকোভস্কি যেমন বলেছিলেন "At its best, cinema comes between music and poetry."
১৯৭৮ এর প্রথম ছবি দূরত্ব থেকেই বুদ্ধদেব এখনও একটি সৈকতে তাঁর গূঢ় স্বপ্ন নিয়ে যেখানে তাঁর সিনেমার চরিত্রেরা স্বপ্নময় বেঁচে থাকার জন্য একটি ভয়ানক যুদ্ধ চালিয়ে যায় বাস্তবের বিপরীতে – আর সেখানেই ফ্যান্টাসি সঙ্গে বোনা হতে থাকে ম্যাজিক রিয়ালিটি ও পরাবাস্তব। একাধিক আলোচনাতেই বুদ্ধদেব স্বীকার করেছেন তিনি সময়ের কাছে দায়বদ্ধ।
প্রথম ‘হিউম্যানিস্ট’ ট্রিলজী – দূরত্ব(১৯৭৮), গৃহযুদ্ধ (১৯৮২) এবং আন্ধি গলি (১৯৮৪)-তে বিশৃঙ্খলার এবং হতাশা মুখে জটিল আন্তঃ এবং অতিরিক্ত ব্যক্তিগত মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষা দিয়ে বুদ্ধদেবের যাত্রা শুরু ।
পরবর্তী দশকে ( ১৯৮৮-১৯৯৮ ) একজন শিল্পীর সৃজনশীলতা, তাঁর আপস , সততা , এবং এই যুগের যোগাযোগের উভয়সঙ্কট কিংবা যোগহীনতা – ফেরা (১৯৮৮), বাঘ বাহাদুর (১৯৮৯) এবং চরাচর (১৯৯৩)। একক মানুষের সংগ্রাম, তাঁর জীবনেতিহাসের সূক্ষ্মতা, অনমনীয়তা উঠে আসে তাহাদের কথা (১৯৯২)-তেও। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে উত্তরা (২০০০) জন্য বিশেষ ডিরেক্টর এর পুরস্কার সঙ্গে, চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যে তাঁর তৃতীয় দশকে প্রবেশ। তবে, পরিচালকের এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় আমি শুধুমাত্র ছুঁয়ে দেখব প্রথম দু দশককেই যাকে এর পর থেকে এই লেখায় ‘আর্লি ফিল্মস’ ব্লে উল্লেখ করা যেতে পারে।
A Dictionary of Symbols এ Herbert Read বলেছেন – "Man, it has been said, is a symbolising animal." বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর প্রথম দিকের এই সব ছবিতেই তিনি সতর্কতার সঙ্গে প্রচলিত গল্প বলার আঙ্গিককে ব্রাত্য করেছেন তাঁর শিল্পে, দাশগুপ্তর আর্লি ফিল্মস মূলত চিহ্ন নির্ভর – প্রায়শই তাই সিনেমার শুরু হয় কোন থীম দিয়ে, কোন ন্যারাটিভ ঘটনার বদলে।
সাধারণত, কেন্দ্রীয় থিম ‘অপেক্ষা’ – খাবারের জন্য নিম অন্নপূর্ণা-য়, কখন প্রেমিকার জন্য কিংবা বিদ্রোহের আশায়, স্বপ্নের জন্য কিংবা লুপ্তপ্রায় কোন আদিম কলার পুনর্বাসনের অভিলাষে।
প্রথম দশকে দাশগুপ্তর প্রায় প্রতিটি ছবিতেই দেখা যাবে লম্বা নির্জন সংকীর্ণ রাস্তা, হয়ত সেখানে লোক একটি বা দুটি কখনও কখনও – আমাদের এই স্টিফ্লিং একজিস্টেন্স তার দ্যোতক। পরবর্তী দশকে মনোবিজ্ঞান , মেমরি, উন্মত্ততা , ভ্রান্তিনিরসন , অবসেশন , অনুভূতি , নিঃসঙ্গতা-জনিত নিরাপত্তাহীনতা এবং স্বপ্ন টলটলায়মান, চিত্রানুগ ভূদৃশ্য যা মহৎ mise-en-scene-এ মিশে যায় অবিরত।
ফেরা এবং চরাচর – এই দুটি ছবিতেই সাউন্ডট্র্যাকে পাখিদের ডাক, কূজন নির্দেশ দেয় ব্যক্তির সহজাত বিয়োগান্তক নিঃসঙ্গতার চিত্রকে। এই সময়ের বাকি ছবিতে আরেকটি অভ্রান্ত মটিফ হল ‘দরজা’ (উল্লেখীয়, বুদ্ধদেবের সাম্প্রতিক ছবিগুলোতে মটিফ হিসেবে আরো বেশী করে আসছে ‘জানালা’) । ফেরা-তে অর্ধেক খোলা (বা বদ্ধ) দরজার রূপকে মার সঙ্গে প্রধান চরিত্রের সম্পর্কের সত্যতা বিষয়ে ছেলেটির অজ্ঞতা প্রকাশ পায়। চরাচর-এ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ফিজিক্যাল দরজা লখীন্দরকে নতুন আশার আলো দেখায় যখন তার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার এবড়খেবড়ো রাস্তাগুলোর পরেও সে দেখে একটি বন্ধ দরজাই । আর লাল দরজা (১৯৯৭) ছবিতে বালকটি জীবনের অনেক-কটা দরজা খোলার গুপ্ত মন্ত্র জানত, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে হারিয়ে ফেলল সেই বোধটাকে, বোধের নীচে শুয়ে থাকা একটি অপাবৃত মনকেও । অর্থাৎ, এই চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে "a person in his/her crises, with conflicts, tensions and the loneliness of nonconformity to existing structures. . .man or woman responding and reaching to, as also absorbing and rejecting, their surroundings, and trying to establish a meaningful communication between fellow human beings. They discover their identity through a faith which enables them to dare to dream of finding acceptance one day."
ভূগোল বা জিওগ্রাফি বুদ্ধদেবের শট কাঠামো্র মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে - সুবিশাল ল্যান্ডস্কেপ ব্যেপে মিড-শটে কিছু মানুষের চলে যাওয়া - ক্ষণস্থায়ী সংযোগ, উত্তরণ, ‘শিকড়’-এর প্রতি টান, অন্তিম ভালবাসা। উত্তর-আধুনিক রিডীং-এ দাশগুপ্তর সিনেমার ‘সেন্টার’ রা শিফট করে তাদের অবস্থান, দর্শক একধরনের বিবশবোধে আচ্ছন্ন হন এই আশঙ্কায় যে এক অনিবার্য নিয়তি-পরিণতি আমাদের ধাবিত করছে কারণ এক বিক্রিত পশ্চিমী নির্ভরতায় আমরা ভুলে যেতে চেয়েছি আমদের ইন্ডিজিনাস সংস্কৃতি।
এই সিনেমায় ফ্যান্টাসির সঙ্গে জাক্সটাপোজ হতে থাকে ঘটনা, মটিফ, মিশে যায় স্বপ্ন, বাস্তব, আকুতি। আমাদের গহনের কোন মানুষ হয়ত কখন বিপন্ন হয়, আগামীর অশনি সংকেতে আর বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মত আমরাও বিশ্বাস করতে শুরু করি - "filmmaking is a quest. There are many questions we have to face in life and I am trying to find answers for some in my films... this is a continuous quest."
[Dainik Statesman, 30th Aug, 2014]
খুব যথাযথ বিশ্লেষণ
ReplyDeleteGrea!!
ReplyDelete