একদা
এক শ্রান্ত বালক হরিদাসকে বলেছিল “আচ্ছা হরিদাস, এখানে এত দুঃখ কেন?”
তথাপি কলকাতা ভালবাসে কাঞ্চনকে – নিবিড় আলিঙ্গনে এবং তার পরেও জীবনের
অভিজ্ঞতা কাঞ্চনকে পরিণত করে না, সে শুধু ফিরে যেতে চায় মায়ের শান্ত কোলের
স্নেহচ্ছায়ায়। ‘কামিং অফ এজ’ ধারার ছবি আদতে বাংলা তথা ভারতীয় ছবিতেই বিরল,
যেটুকু যা তা অপাপবিদ্ধ নিষ্কলুষ দর্শনে বিশ্বাসী । বিদেশী এই ঘরানার
ছবিতে আবশ্যিক নিশ্চয়তায় উন্মোচিত হয় যৌন-চেতনার উন্মেষ । তাই দামাল
ভালবাসার ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ শুধুমাত্র ‘ছোটদের ছবি’ই। যৌন ও মৃত্যু চেতনা
এই দুই জীবন-রহস্য কাঞ্চনকে বিপন্ন করে না । তাই আমাদের দেশে লেখা হয় না
কোন ‘সং-স অফ ইনোসেন্স’ ও ‘সং-স অফ এক্সপিরিয়েন্স’।
ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরির সাম্প্রতিক ছবি ‘ফড়িং' নিঃসন্দেহে মনে পড়ায় উইলিয়াম ব্লেক-কে। ছবি শুরু হয় এক ড্রিম সিকয়েন্সে যেখানে চোদ্দ বছরের ফড়িং ফ্যান্টাসাইজ করে এজ তরুণীর যিনি তাদের টিচার এং তার নাইটফল হয় । অল্প পরেই ফড়িং-এর স্বকথনের সঙ্গী ঈশ্বর মারফত আমরা জানতে পারি ফড়িং আত্মহত্যা করতে চায় হতাশায়, তাহলেই বাবা-মা কে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারা যাবে, ভাবে সে। উত্তরবঙ্গের নিস্তরঙ্গ এক শহরে ফড়িং-এর বাস। এখানে প্রকৃতি উদার , বন্ধু, সহচর। এবং যে সব মানুষ নিরিবিলি অবগাহন খোঁজে তাদের কাছে আশ্রয় ও। এই পরম নিশ্চিন্তির দেশে টিচার দোয়েল মিত্র ছোট্ট নুড়ির মত, প্যাটার্ন ভাঙ্গে এক জায়গায়, প্যাটার্ন তৈরি হয় অন্যত্র। দোয়েলের সাথে ফড়িং-এর ভাবও তাই আপাত টিচার-স্টুডেন্ট এই মামুলি ছক ভেঙ্গে ফেলে, যেখানে ফড়িং লুকিয়ে দোয়েলের অন্তর্বাসের সুবাস নেয়, লুকিয়ে দেখতে থাকে দোয়েলের পায়ের গোছ, অজান্তে হয়ে উঠতে চায় দোয়েলের রক্ষাকর্তা । অন্য বন্ধুদের কাছে দোয়েল যেখানে অব্জেক্ট অফ ডিজায়ার, ফড়িন-এর সেখানেই জয় – দোয়েল তাঁর জীবন ধারণের অঙ্গ। জীবন এক অবিঘ্নিত আনন্দের প্রবহমানতা নয়, জীবন এখানে ফ্যান্টাসির সঙ্গে রিয়ালিটির টানাপোড়েন, টাটকা, জটিল। পরিচালক সারা ছবি জুড়েই অসংখ্য স্টক শট ছড়িয়ে রাখেন সাবটেক্সটের সম্ভাবনা নিয়ে। এর মাঝেই সহসা হারিয়ে যায় জীবনের ছন্দ – জোড়া ঘটনার আকস্মিক অভিঘাতে। দোয়েল হারিয়ে যায়, যেতে চায় বলেই, তার পলিটিকাল স্টান্সের দৌলতে। ফড়িং ও রেস্পন্ড করে সময়ের, তার মনের – যৌন চেতনা অ মৃত্যু নিয়ে রোম্যান্টিকতা মুছে যায়, দোয়েলের খোঁজে কলকাতা আসে সে, দেখা হয়, ছেড়ে আসা হয়, ফিরে আসার কথা বুকের গভীরে নিয়ে। আর এখানেই ফড়িং এক লাফে কাঞ্চনের মনের বয়সকে পিছনে ফেলে দেয়, এত পরেও বাড়ি ফিরে বন্ধু লাট্টু আর মা বাবা-কে দেখে সে বুঝতে পারে গলার কাছটায় কেমন জমাট কষ্ট, তা সে বোঝেনি এতকাল। কিংবা হয়ত ইগ্নোর করেছে সযত্নে।
লাস হলস্ট্রমের ১৯৮৫ র ছবি ‘মাই লাইফ এজ আ ডগ’ এর ইংমারের ছায়া অনেকটা দেখতে পাই ফড়িং-এর মধ্যেও। ইংমারের ধারণা, তাকে এ পৃথিবীতে আনা হয়েছে অনীচ্ছায়, এক দুর্বল মুহূর্তে সে তার মা-কে বলে ফেলে – ‘ওয়াই ডিড ইয়ু নট ওয়ান্ট মি, মা’ । এই ভালবাসাহীনতার সমান্তরালে দাঁড়িয়ে ফড়িং বুঝতে পারে দোয়েলই একমাত্র যে তার সাথে বাহ্যিক ভাল ব্যবহার করে । আর তাই হয়ত ইংমারের মত ফড়িংও মনে মনে ভাবে ‘ইয়ু হ্যাভ টু কম্পেয়ার, ইট কুড বি ওয়ার্স’। বডদের দুনিয়ায় অন্তেবাসী, জীবনযুদ্ধে পরাক্রান্ত, বিভ্রান্ত ফড়িং এখানেই মিশে যেতে থাকে ইংমারের মধ্যে। এবং ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর অবিস্মরণীয় ‘৪০০ ব্লো-জ’ এর আতোঁয়ার সঙ্গেও। ইংমার,আতোঁয়া এবং ফড়িং – কোন সহানুভূতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়না বলেই এরা এত বেশী বাস্তব,জ্যান্ত। আদ্যন্ত ব্যক্তিগত কিন্তু এততসত্বেও হয়ে ওঠে সামগ্রিক আমাদের সবার বেড়ে ওঠার আখ্যান – তাই ‘ফড়িং’এর পোস্টারে লেখা থাকে – “বড়দের ছোটবেলার কাহিনী” , জাক রিভেট তাঁর রিভিয়ুতে যেমন বলেছিলেন ‘৪০০ ব্লো-জ’ নিয়ে – ‘ইন স্পিকিং অফ হিমসেলফ, হি সিমস টু বি স্পিকিং অফ আস’।
পূর্বেই বলেছি এই ছবিতে যৌন উন্মেষ এসেছে সহজভাবেই। একটি ছেলেদের ইস্কুল যেখানে বছর ১৪-১৫ র ছেলেদের আমরা দেখি তাদের জীবনের অলিন্দে আছে স্বপ্ন, স্বপ্নপূরণ, স্বপ্নভঙ্গ – আর এই সব ঘিরে খুব লেটেন্ট-ভাবে রয়েছে এক যৌন আকাঙ্ক্ষা, অবদমিত, রহস্যাবৃত । তাই দোয়েলকে নিয়ে ফড়িং-এর সাথে তাঁর ইস্কুলের বন্ধুদের চলে প্রতিযোগিতা, মৈথুন-ইপ্সা। এবং স্বাভাবিক-ভাবেই এই ফিলিংসে জড়িয়ে আছে পাপবোধ থেকে উৎসারিত ভীতি, অদম্য কৌতূহল ও পরিশেষে কৌতুক। এই পরিপ্রেক্ষিতে মনে পড়ে যায় জিরি মেনজিলের ১৯৬৭ র চেকোস্লাভাকিয়ার দর্পন ‘ক্লোসলি ওয়াচড ট্রেন’ । যদিও মিলোসের বয়স ফড়িং, আতোঁয়া কিংবা ইংমারের চেয়ে অনেকটাই বেশী, তবুও যৌন অভিজ্ঞতার জায়গায় কোথাও যেন এদের মধ্যে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মেনজিলের ছবি যা আপাতভাবে সেক্স-কমেডি হিসেবে শুরু হয় ক্রমশই তা হয়ে উঠতে থাকে নাজী অধিকৃত বাসভূমির জন্য হতাশা, ক্ষোভ ও হাহাকার। এবং সেটা অচিরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের পুর্ব-ইউরোপের সামগ্রিক রূপ আমাদের সামনে তুলে ধরে – চরম একাকীত্ব ও সংযোগহীনতা । ‘ফড়িং’এও আমরা সেভাবেই একটা ক্ষীণ পলিটিকাল স্টেটমেন্ট পাই যখন দেখি উত্তরবঙ্গের এই সামান্য শহরটির একমাত্র কারখানাও লক-আউটে বন্ধ এবং তজ্জনিত কারণে একটা শ্রম-সক্ষম শ্রেণী কিভাবে আস্তে আস্তে নিশ্চেষ্ট, নিষ্ক্রিয় – তার প্রভাব পড়ছে ফড়িং-দের প্রজন্মের ওপর। আর তাকে ঘিরে রয়েছে উত্তরবঙ্গ তথা সারা ভারত জুড়ে এক বিপ্লবের আগুন যার আঁচ পায় ফড়িং। ফড়িং-এর বয়স-সন্ধি তাই অপাবৃত আনন্দের অবগাহন নয়, শরীর ঘিরে যে শঙ্কা, আন্সারটেইনিটি তা বিস্তৃত হয় সমাজ, প্রকৃতি ও ভালবাসার মধ্যে ও। আর তাই এই ‘কামিং অফ এজ’ শুধু মাত্র ফড়িং-এর নয়, এ আমাদের সমাজব্যবস্থারও, আমাদের রাজনৈতিক চেতনার, জাতি হিশেবে আমাদের সামগ্রিক মূল্যায়ণ এবং স্ট্যান্ডিং। এক কলকাতা-কেন্দ্রিক অশ্লীল একজিস্টেন্স এবং একজিবিশন যা আমাদের চুড়ান্ত পশ্চাৎগামীই করে তুলেছে গত অনেক-কটা দশক ধরে। আর সেকারণেই ‘ফড়িং’ শুধুমাত্র বড়দের ছোটবেলার নস্টালজিয়া হয়ে থাকে না, হয়ে ওঠে ছোটদের সতর্ক হয়ে ওঠার আখ্যান ও।
ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরির সাম্প্রতিক ছবি ‘ফড়িং' নিঃসন্দেহে মনে পড়ায় উইলিয়াম ব্লেক-কে। ছবি শুরু হয় এক ড্রিম সিকয়েন্সে যেখানে চোদ্দ বছরের ফড়িং ফ্যান্টাসাইজ করে এজ তরুণীর যিনি তাদের টিচার এং তার নাইটফল হয় । অল্প পরেই ফড়িং-এর স্বকথনের সঙ্গী ঈশ্বর মারফত আমরা জানতে পারি ফড়িং আত্মহত্যা করতে চায় হতাশায়, তাহলেই বাবা-মা কে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারা যাবে, ভাবে সে। উত্তরবঙ্গের নিস্তরঙ্গ এক শহরে ফড়িং-এর বাস। এখানে প্রকৃতি উদার , বন্ধু, সহচর। এবং যে সব মানুষ নিরিবিলি অবগাহন খোঁজে তাদের কাছে আশ্রয় ও। এই পরম নিশ্চিন্তির দেশে টিচার দোয়েল মিত্র ছোট্ট নুড়ির মত, প্যাটার্ন ভাঙ্গে এক জায়গায়, প্যাটার্ন তৈরি হয় অন্যত্র। দোয়েলের সাথে ফড়িং-এর ভাবও তাই আপাত টিচার-স্টুডেন্ট এই মামুলি ছক ভেঙ্গে ফেলে, যেখানে ফড়িং লুকিয়ে দোয়েলের অন্তর্বাসের সুবাস নেয়, লুকিয়ে দেখতে থাকে দোয়েলের পায়ের গোছ, অজান্তে হয়ে উঠতে চায় দোয়েলের রক্ষাকর্তা । অন্য বন্ধুদের কাছে দোয়েল যেখানে অব্জেক্ট অফ ডিজায়ার, ফড়িন-এর সেখানেই জয় – দোয়েল তাঁর জীবন ধারণের অঙ্গ। জীবন এক অবিঘ্নিত আনন্দের প্রবহমানতা নয়, জীবন এখানে ফ্যান্টাসির সঙ্গে রিয়ালিটির টানাপোড়েন, টাটকা, জটিল। পরিচালক সারা ছবি জুড়েই অসংখ্য স্টক শট ছড়িয়ে রাখেন সাবটেক্সটের সম্ভাবনা নিয়ে। এর মাঝেই সহসা হারিয়ে যায় জীবনের ছন্দ – জোড়া ঘটনার আকস্মিক অভিঘাতে। দোয়েল হারিয়ে যায়, যেতে চায় বলেই, তার পলিটিকাল স্টান্সের দৌলতে। ফড়িং ও রেস্পন্ড করে সময়ের, তার মনের – যৌন চেতনা অ মৃত্যু নিয়ে রোম্যান্টিকতা মুছে যায়, দোয়েলের খোঁজে কলকাতা আসে সে, দেখা হয়, ছেড়ে আসা হয়, ফিরে আসার কথা বুকের গভীরে নিয়ে। আর এখানেই ফড়িং এক লাফে কাঞ্চনের মনের বয়সকে পিছনে ফেলে দেয়, এত পরেও বাড়ি ফিরে বন্ধু লাট্টু আর মা বাবা-কে দেখে সে বুঝতে পারে গলার কাছটায় কেমন জমাট কষ্ট, তা সে বোঝেনি এতকাল। কিংবা হয়ত ইগ্নোর করেছে সযত্নে।
লাস হলস্ট্রমের ১৯৮৫ র ছবি ‘মাই লাইফ এজ আ ডগ’ এর ইংমারের ছায়া অনেকটা দেখতে পাই ফড়িং-এর মধ্যেও। ইংমারের ধারণা, তাকে এ পৃথিবীতে আনা হয়েছে অনীচ্ছায়, এক দুর্বল মুহূর্তে সে তার মা-কে বলে ফেলে – ‘ওয়াই ডিড ইয়ু নট ওয়ান্ট মি, মা’ । এই ভালবাসাহীনতার সমান্তরালে দাঁড়িয়ে ফড়িং বুঝতে পারে দোয়েলই একমাত্র যে তার সাথে বাহ্যিক ভাল ব্যবহার করে । আর তাই হয়ত ইংমারের মত ফড়িংও মনে মনে ভাবে ‘ইয়ু হ্যাভ টু কম্পেয়ার, ইট কুড বি ওয়ার্স’। বডদের দুনিয়ায় অন্তেবাসী, জীবনযুদ্ধে পরাক্রান্ত, বিভ্রান্ত ফড়িং এখানেই মিশে যেতে থাকে ইংমারের মধ্যে। এবং ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর অবিস্মরণীয় ‘৪০০ ব্লো-জ’ এর আতোঁয়ার সঙ্গেও। ইংমার,আতোঁয়া এবং ফড়িং – কোন সহানুভূতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়না বলেই এরা এত বেশী বাস্তব,জ্যান্ত। আদ্যন্ত ব্যক্তিগত কিন্তু এততসত্বেও হয়ে ওঠে সামগ্রিক আমাদের সবার বেড়ে ওঠার আখ্যান – তাই ‘ফড়িং’এর পোস্টারে লেখা থাকে – “বড়দের ছোটবেলার কাহিনী” , জাক রিভেট তাঁর রিভিয়ুতে যেমন বলেছিলেন ‘৪০০ ব্লো-জ’ নিয়ে – ‘ইন স্পিকিং অফ হিমসেলফ, হি সিমস টু বি স্পিকিং অফ আস’।
পূর্বেই বলেছি এই ছবিতে যৌন উন্মেষ এসেছে সহজভাবেই। একটি ছেলেদের ইস্কুল যেখানে বছর ১৪-১৫ র ছেলেদের আমরা দেখি তাদের জীবনের অলিন্দে আছে স্বপ্ন, স্বপ্নপূরণ, স্বপ্নভঙ্গ – আর এই সব ঘিরে খুব লেটেন্ট-ভাবে রয়েছে এক যৌন আকাঙ্ক্ষা, অবদমিত, রহস্যাবৃত । তাই দোয়েলকে নিয়ে ফড়িং-এর সাথে তাঁর ইস্কুলের বন্ধুদের চলে প্রতিযোগিতা, মৈথুন-ইপ্সা। এবং স্বাভাবিক-ভাবেই এই ফিলিংসে জড়িয়ে আছে পাপবোধ থেকে উৎসারিত ভীতি, অদম্য কৌতূহল ও পরিশেষে কৌতুক। এই পরিপ্রেক্ষিতে মনে পড়ে যায় জিরি মেনজিলের ১৯৬৭ র চেকোস্লাভাকিয়ার দর্পন ‘ক্লোসলি ওয়াচড ট্রেন’ । যদিও মিলোসের বয়স ফড়িং, আতোঁয়া কিংবা ইংমারের চেয়ে অনেকটাই বেশী, তবুও যৌন অভিজ্ঞতার জায়গায় কোথাও যেন এদের মধ্যে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মেনজিলের ছবি যা আপাতভাবে সেক্স-কমেডি হিসেবে শুরু হয় ক্রমশই তা হয়ে উঠতে থাকে নাজী অধিকৃত বাসভূমির জন্য হতাশা, ক্ষোভ ও হাহাকার। এবং সেটা অচিরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের পুর্ব-ইউরোপের সামগ্রিক রূপ আমাদের সামনে তুলে ধরে – চরম একাকীত্ব ও সংযোগহীনতা । ‘ফড়িং’এও আমরা সেভাবেই একটা ক্ষীণ পলিটিকাল স্টেটমেন্ট পাই যখন দেখি উত্তরবঙ্গের এই সামান্য শহরটির একমাত্র কারখানাও লক-আউটে বন্ধ এবং তজ্জনিত কারণে একটা শ্রম-সক্ষম শ্রেণী কিভাবে আস্তে আস্তে নিশ্চেষ্ট, নিষ্ক্রিয় – তার প্রভাব পড়ছে ফড়িং-দের প্রজন্মের ওপর। আর তাকে ঘিরে রয়েছে উত্তরবঙ্গ তথা সারা ভারত জুড়ে এক বিপ্লবের আগুন যার আঁচ পায় ফড়িং। ফড়িং-এর বয়স-সন্ধি তাই অপাবৃত আনন্দের অবগাহন নয়, শরীর ঘিরে যে শঙ্কা, আন্সারটেইনিটি তা বিস্তৃত হয় সমাজ, প্রকৃতি ও ভালবাসার মধ্যে ও। আর তাই এই ‘কামিং অফ এজ’ শুধু মাত্র ফড়িং-এর নয়, এ আমাদের সমাজব্যবস্থারও, আমাদের রাজনৈতিক চেতনার, জাতি হিশেবে আমাদের সামগ্রিক মূল্যায়ণ এবং স্ট্যান্ডিং। এক কলকাতা-কেন্দ্রিক অশ্লীল একজিস্টেন্স এবং একজিবিশন যা আমাদের চুড়ান্ত পশ্চাৎগামীই করে তুলেছে গত অনেক-কটা দশক ধরে। আর সেকারণেই ‘ফড়িং’ শুধুমাত্র বড়দের ছোটবেলার নস্টালজিয়া হয়ে থাকে না, হয়ে ওঠে ছোটদের সতর্ক হয়ে ওঠার আখ্যান ও।
No comments:
Post a Comment