Monday, November 10, 2014

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘আর্লি ফিল্মস’

"When I look at a painting for sometime I begin to see images beyond the lines on the canvas. In poetry I perceive a pattern arising from the verbal signs, which appears, shifts and dissolves in the mind. When I began to make films, my only desire was to produce those non static images that I had seen behind closed eyes." 
    বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত 

যৌবন থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন বুদ্ধদেব এবং সেই থেকেই কবিতা এবং গান তাঁকে হ্নট করতে থাকে। এবং দুটো থেকেই জন্ম নিতে পারে এক আশ্চর্য ভিসুয়াল। আন্দ্রেই তারকোভস্কি যেমন বলেছিলেন "At its best, cinema comes between music and poetry."  
১৯৭৮ এর প্রথম ছবি দূরত্ব থেকেই বুদ্ধদেব এখনও একটি সৈকতে তাঁর গূঢ় স্বপ্ন নিয়ে যেখানে তাঁর সিনেমার চরিত্রেরা স্বপ্নময় বেঁচে থাকার জন্য একটি ভয়ানক যুদ্ধ চালিয়ে যায় বাস্তবের বিপরীতে আর সেখানেই ফ্যান্টাসি সঙ্গে বোনা হতে থাকে ম্যাজিক রিয়ালিটি ও পরাবাস্তব। একাধিক আলোচনাতেই বুদ্ধদেব স্বীকার করেছেন তিনি সময়ের কাছে দায়বদ্ধ। 
প্রথম হিউম্যানিস্ট ট্রিলজী দূরত্ব(১৯৭৮), গৃহযুদ্ধ (১৯৮২) এবং আন্ধি গলি (১৯৮৪)-তে বিশৃঙ্খলার এবং হতাশা মুখে জটিল আন্ত এবং অতিরিক্ত ব্যক্তিগত মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষা দিয়ে বুদ্ধদেবের যাত্রা শুরু
পরবর্তী দশকে ( ১৯৮৮-১৯৯৮ ) একজন শিল্পীর সৃজনশীলতা, তাঁর আপস , সততা , এবং এই যুগের যোগাযোগের উভয়সঙ্কট কিংবা যোগহীনতা ফেরা (১৯৮৮), বাঘ বাহাদুর (১৯৮৯) এবং চরাচর (১৯৯৩)। একক মানুষের সংগ্রাম, তাঁর জীবনেতিহাসের সূক্ষ্মতা, অনমনীয়তা উঠে আসে তাহাদের কথা (১৯৯২)-তেও। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে উত্তরা (২০০০) জন্য বিশেষ ডিরেক্টর এর পুরস্কার সঙ্গে, চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্যে তাঁর তৃতীয় দশকে প্রবেশ। তবে, পরিচালকের এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকা আমি শুধুমাত্র ছুঁয়ে দেখব প্রথম দু দশককেই যাকে এর পর থেকে এই লেখায় আর্লি ফিল্মস ব্লে উল্লেখ করা যেতে পারে।
A Dictionary of Symbols Herbert Read বলেছেন "Man, it has been said, is a symbolising animal." বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর প্রথম দিকের এই সব ছবিতেই তিনি সতর্কতার সঙ্গে প্রচলিত গল্প বলার আঙ্গিককে ব্রাত্য করেছেন তাঁর শিল্পে, দাশগুপ্তর আর্লি ফিল্মস মূলত চিহ্ন নির্ভর প্রায়শই তাই সিনেমার শুরু হয় কোন থীম দিয়ে, কোন ন্যারাটিভ ঘটনার বদলে।
সাধারণত, কেন্দ্রীয় থিম অপেক্ষা খাবারের জন্য নিম অন্নপূর্ণা-য়, কখন প্রেমিকার জন্য কিংবা বিদ্রোহের আশায়, স্বপ্নের জন্য কিংবা লুপ্তপ্রায় কোন আদিম কলার পুনর্বাসনের অভিলাষে।
প্রথম দশকে দাশগুপ্তর প্রায় প্রতিটি ছবিতেই দেখা যাবে লম্বা নির্জন সংকীর্ণ রাস্তা, হয়ত সেখানে লোক একটি বা দুটি কখনও কখনও আমাদের এই স্টিফ্লিং একজিস্টেন্স তার দ্যোতক। পরবর্তী দশকে মনোবিজ্ঞান , মেমরি, উন্মত্ততা , ভ্রান্তিনিরসন , অবসেশন , অনুভূতি , নিঃসঙ্গতা-জনিত নিরাপত্তাহীনতা এবং স্বপ্ন টলটলায়মান, চিত্রানুগ ভূদৃশ্য যা মহৎ mise-en-scene-এ মিশে যায় অবিরত।
ফেরা এবং চরাচর এই দুটি ছবিতেই সাউন্ডট্র্যাকে পাখিদের ডাক, কূজন নির্দেশ দেয় ব্যক্তির সহজাত বিয়োগান্তক নিঃসঙ্গতার চিত্রকে। এই সময়ের বাকি ছবিতে আরেকটি অভ্রান্ত মটিফ হল দরজা (উল্লেখীয়, বুদ্ধদেবের সাম্প্রতিক ছবিগুলোতে মটিফ হিসেবে আরো বেশী করে আসছে জানালা) । ফেরা-তে  অর্ধেক খোলা (বা বদ্ধ) দরজার রূপকে মার সঙ্গে প্রধান চরিত্রের সম্পর্কের সত্যতা বিষয়ে ছেলেটির অজ্ঞতা প্রকাশ পায়। চরাচর-এ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ফিজিক্যাল দরজা লখীন্দরকে নতুন আশার আলো দেখায় যখন তার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার এবড়খেবড়ো রাস্তাগুলোর পরেও সে দেখে একটি বন্ধ দরজাই । আর লাল দরজা (১৯৯৭) ছবিতে বালকটি জীবনের অনেক-কটা দরজা খোলার গুপ্ত মন্ত্র জানত, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে হারিয়ে ফেলল সেই বোধটাকে, বোধের নীচে শুয়ে থাকা একটি অপাবৃত মনকেও । অর্থাৎ, এই চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে "a person in his/her crises, with conflicts, tensions and the loneliness of nonconformity to existing structures. . .man or woman responding and reaching to, as also absorbing and rejecting, their surroundings, and trying to establish a meaningful communication between fellow human beings. They discover their identity through a faith which enables them to dare to dream of finding acceptance one day."
ভূগোল বা জিওগ্রাফি বুদ্ধদেবের শট কাঠামো্র মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে - সুবিশাল ল্যান্ডস্কেপ ব্যেপে মিড-শটে কিছু মানুষের চলে যাওয়া - ক্ষণস্থায়ী সংযোগ, উত্তরণ, শিকড়-এর প্রতি টান, অন্তিম ভালবাসা। উত্তর-আধুনিক রিডীং-এ দাশগুপ্তর সিনেমার সেন্টার রা শিফট করে তাদের অবস্থান, দর্শক একধরনের বিবশবোধে আচ্ছন্ন হন এই আশঙ্কায় যে এক অনিবার্য নিয়তি-পরিণতি আমাদের ধাবিত করছে কারণ এক বিক্রিত পশ্চিমী নির্ভরতায় আমরা ভুলে যেতে চেয়েছি আমদের ইন্ডিজিনাস সংস্কৃতি।
এই সিনেমায় ফ্যান্টাসি সঙ্গে জাক্সটাপোজ হতে থাকে ঘটনা, মটিফ, মিশে যায় স্বপ্ন, বাস্তব, আকুতি। আমাদের গহনের কোন মানুষ হয়ত কখন বিপন্ন হয়, আগামীর অশনি সংকেতে আর বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মত আমরাও বিশ্বাস করতে শুরু করি - "filmmaking is a quest. There are many questions we have to face in life and I am trying to find answers for some in my films... this is a continuous quest."

[Dainik Statesman, 30th Aug, 2014]

ফড়িং ও আমাদের বড় হওয়া

একদা এক শ্রান্ত বালক হরিদাসকে বলেছিল “আচ্ছা হরিদাস, এখানে এত দুঃখ কেন?” তথাপি কলকাতা ভালবাসে কাঞ্চনকে – নিবিড় আলিঙ্গনে এবং তার পরেও জীবনের অভিজ্ঞতা কাঞ্চনকে পরিণত করে না, সে শুধু ফিরে যেতে চায় মায়ের শান্ত কোলের স্নেহচ্ছায়ায়। ‘কামিং অফ এজ’ ধারার ছবি আদতে বাংলা তথা ভারতীয় ছবিতেই বিরল, যেটুকু যা তা অপাপবিদ্ধ নিষ্কলুষ দর্শনে বিশ্বাসী । বিদেশী এই ঘরানার ছবিতে আবশ্যিক নিশ্চয়তায় উন্মোচিত হয় যৌন-চেতনার উন্মেষ । তাই দামাল ভালবাসার ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ শুধুমাত্র ‘ছোটদের ছবি’ই। যৌন ও মৃত্যু চেতনা এই দুই জীবন-রহস্য কাঞ্চনকে বিপন্ন করে না । তাই আমাদের দেশে লেখা হয় না কোন ‘সং-স অফ ইনোসেন্স’ ও ‘সং-স অফ এক্সপিরিয়েন্স’।
ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরির সাম্প্রতিক ছবি ‘ফড়িং' নিঃসন্দেহে মনে পড়ায় উইলিয়াম ব্লেক-কে। ছবি শুরু হয় এক ড্রিম সিকয়েন্সে যেখানে চোদ্দ বছরের ফড়িং ফ্যান্টাসাইজ করে এজ তরুণীর যিনি তাদের টিচার এং তার নাইটফল হয় । অল্প পরেই ফড়িং-এর স্বকথনের সঙ্গী ঈশ্বর মারফত আমরা জানতে পারি ফড়িং আত্মহত্যা করতে চায় হতাশায়, তাহলেই বাবা-মা কে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারা যাবে, ভাবে সে। উত্তরবঙ্গের নিস্তরঙ্গ এক শহরে ফড়িং-এর বাস। এখানে প্রকৃতি উদার , বন্ধু, সহচর। এবং যে সব মানুষ নিরিবিলি অবগাহন খোঁজে তাদের কাছে আশ্রয় ও। এই পরম নিশ্চিন্তির দেশে টিচার দোয়েল মিত্র ছোট্ট নুড়ির মত, প্যাটার্ন ভাঙ্গে এক জায়গায়, প্যাটার্ন তৈরি হয় অন্যত্র। দোয়েলের সাথে ফড়িং-এর ভাবও তাই আপাত টিচার-স্টুডেন্ট এই মামুলি ছক ভেঙ্গে ফেলে, যেখানে ফড়িং লুকিয়ে দোয়েলের অন্তর্বাসের সুবাস নেয়, লুকিয়ে দেখতে থাকে দোয়েলের পায়ের গোছ, অজান্তে হয়ে উঠতে চায় দোয়েলের রক্ষাকর্তা । অন্য বন্ধুদের কাছে দোয়েল যেখানে অব্জেক্ট অফ ডিজায়ার, ফড়িন-এর সেখানেই জয় – দোয়েল তাঁর জীবন ধারণের অঙ্গ। জীবন এক অবিঘ্নিত আনন্দের প্রবহমানতা নয়, জীবন এখানে ফ্যান্টাসির সঙ্গে রিয়ালিটির টানাপোড়েন, টাটকা, জটিল। পরিচালক সারা ছবি জুড়েই অসংখ্য স্টক শট ছড়িয়ে রাখেন সাবটেক্সটের সম্ভাবনা নিয়ে। এর মাঝেই সহসা হারিয়ে যায় জীবনের ছন্দ – জোড়া ঘটনার আকস্মিক অভিঘাতে। দোয়েল হারিয়ে যায়, যেতে চায় বলেই, তার পলিটিকাল স্টান্সের দৌলতে। ফড়িং ও রেস্পন্ড করে সময়ের, তার মনের – যৌন চেতনা অ মৃত্যু নিয়ে রোম্যান্টিকতা মুছে যায়, দোয়েলের খোঁজে কলকাতা আসে সে, দেখা হয়, ছেড়ে আসা হয়, ফিরে আসার কথা বুকের গভীরে নিয়ে। আর এখানেই ফড়িং এক লাফে কাঞ্চনের মনের বয়সকে পিছনে ফেলে দেয়, এত পরেও বাড়ি ফিরে বন্ধু লাট্টু আর মা বাবা-কে দেখে সে বুঝতে পারে গলার কাছটায় কেমন জমাট কষ্ট, তা সে বোঝেনি এতকাল। কিংবা হয়ত ইগ্নোর করেছে সযত্নে।
লাস হলস্ট্রমের ১৯৮৫ র ছবি ‘মাই লাইফ এজ আ ডগ’ এর ইংমারের ছায়া অনেকটা দেখতে পাই ফড়িং-এর মধ্যেও। ইংমারের ধারণা, তাকে এ পৃথিবীতে আনা হয়েছে অনীচ্ছায়, এক দুর্বল মুহূর্তে সে তার মা-কে বলে ফেলে – ‘ওয়াই ডিড ইয়ু নট ওয়ান্ট মি, মা’ । এই ভালবাসাহীনতার সমান্তরালে দাঁড়িয়ে ফড়িং বুঝতে পারে দোয়েলই একমাত্র যে তার সাথে বাহ্যিক ভাল ব্যবহার করে । আর তাই হয়ত ইংমারের মত ফড়িংও মনে মনে ভাবে ‘ইয়ু হ্যাভ টু কম্পেয়ার, ইট কুড বি ওয়ার্স’। বডদের দুনিয়ায় অন্তেবাসী, জীবনযুদ্ধে পরাক্রান্ত, বিভ্রান্ত ফড়িং এখানেই মিশে যেতে থাকে ইংমারের মধ্যে। এবং ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর অবিস্মরণীয় ‘৪০০ ব্লো-জ’ এর আতোঁয়ার সঙ্গেও। ইংমার,আতোঁয়া এবং ফড়িং – কোন সহানুভূতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়না বলেই এরা এত বেশী বাস্তব,জ্যান্ত। আদ্যন্ত ব্যক্তিগত কিন্তু এততসত্বেও হয়ে ওঠে সামগ্রিক আমাদের সবার বেড়ে ওঠার আখ্যান – তাই ‘ফড়িং’এর পোস্টারে লেখা থাকে – “বড়দের ছোটবেলার কাহিনী” , জাক রিভেট তাঁর রিভিয়ুতে যেমন বলেছিলেন ‘৪০০ ব্লো-জ’ নিয়ে – ‘ইন স্পিকিং অফ হিমসেলফ, হি সিমস টু বি স্পিকিং অফ আস’।
পূর্বেই বলেছি এই ছবিতে যৌন উন্মেষ এসেছে সহজভাবেই। একটি ছেলেদের ইস্কুল যেখানে বছর ১৪-১৫ র ছেলেদের আমরা দেখি তাদের জীবনের অলিন্দে আছে স্বপ্ন, স্বপ্নপূরণ, স্বপ্নভঙ্গ – আর এই সব ঘিরে খুব লেটেন্ট-ভাবে রয়েছে এক যৌন আকাঙ্ক্ষা, অবদমিত, রহস্যাবৃত । তাই দোয়েলকে নিয়ে ফড়িং-এর সাথে তাঁর ইস্কুলের বন্ধুদের চলে প্রতিযোগিতা, মৈথুন-ইপ্সা। এবং স্বাভাবিক-ভাবেই এই ফিলিংসে জড়িয়ে আছে পাপবোধ থেকে উৎসারিত ভীতি, অদম্য কৌতূহল ও পরিশেষে কৌতুক। এই পরিপ্রেক্ষিতে মনে পড়ে যায় জিরি মেনজিলের ১৯৬৭ র চেকোস্লাভাকিয়ার দর্পন ‘ক্লোসলি ওয়াচড ট্রেন’ । যদিও মিলোসের বয়স ফড়িং, আতোঁয়া কিংবা ইংমারের চেয়ে অনেকটাই বেশী, তবুও যৌন অভিজ্ঞতার জায়গায় কোথাও যেন এদের মধ্যে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মেনজিলের ছবি যা আপাতভাবে সেক্স-কমেডি হিসেবে শুরু হয় ক্রমশই তা হয়ে উঠতে থাকে নাজী অধিকৃত বাসভূমির জন্য হতাশা, ক্ষোভ ও হাহাকার। এবং সেটা অচিরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের পুর্ব-ইউরোপের সামগ্রিক রূপ আমাদের সামনে তুলে ধরে – চরম একাকীত্ব ও সংযোগহীনতা । ‘ফড়িং’এও আমরা সেভাবেই একটা ক্ষীণ পলিটিকাল স্টেটমেন্ট পাই যখন দেখি উত্তরবঙ্গের এই সামান্য শহরটির একমাত্র কারখানাও লক-আউটে বন্ধ এবং তজ্জনিত কারণে একটা শ্রম-সক্ষম শ্রেণী কিভাবে আস্তে আস্তে নিশ্চেষ্ট, নিষ্ক্রিয় – তার প্রভাব পড়ছে ফড়িং-দের প্রজন্মের ওপর। আর তাকে ঘিরে রয়েছে উত্তরবঙ্গ তথা সারা ভারত জুড়ে এক বিপ্লবের আগুন যার আঁচ পায় ফড়িং। ফড়িং-এর বয়স-সন্ধি তাই অপাবৃত আনন্দের অবগাহন নয়, শরীর ঘিরে যে শঙ্কা, আন্সারটেইনিটি তা বিস্তৃত হয় সমাজ, প্রকৃতি ও ভালবাসার মধ্যে ও। আর তাই এই ‘কামিং অফ এজ’ শুধু মাত্র ফড়িং-এর নয়, এ আমাদের সমাজব্যবস্থারও, আমাদের রাজনৈতিক চেতনার, জাতি হিশেবে আমাদের সামগ্রিক মূল্যায়ণ এবং স্ট্যান্ডিং। এক কলকাতা-কেন্দ্রিক অশ্লীল একজিস্টেন্স এবং একজিবিশন যা আমাদের চুড়ান্ত পশ্চাৎগামীই করে তুলেছে গত অনেক-কটা দশক ধরে। আর সেকারণেই ‘ফড়িং’ শুধুমাত্র বড়দের ছোটবেলার নস্টালজিয়া হয়ে থাকে না, হয়ে ওঠে ছোটদের সতর্ক হয়ে ওঠার আখ্যান ও।

নিজস্ব আলোকেই ভারতীয় ছবির বিশ্লেষণ কাম্য

['একক মাত্রা'-য় (পঞ্চদশ বর্ষ, তৃতীয়  সংখ্যা,নভেম্বর ২০১৪) প্রকাশিত | নীচের লেখাটি মূল লেখা, পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি এর থেকে কিছুটা সম্পাদিত ]

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পণ্ডিত মাধব প্রসাদ ভারতীয় ও হলিউড সিনেমার বিভাজন উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে ভারতীয় সিনেমা ভিন্নধর্মী হেটেরজিনিযাস উত্পাদনের নমুনা ও হলিউড সিনেমা সিরিয়াল উত্পাদনের ফর্ম মেনেই। হলিউড সিনেমার  কেন্দ্রে অবস্থান করে 'গল্প' যা অনেকক্ষেত্রেই 'বাস্তববাদী' এবং এর ফলে দর্শকদের আইডেনটিফিকশনের সম্ভাবনা বেশি এবং তা স্বয়ংক্রিয় হয় । প্রফেসর প্রসাদের মত মেনে ভারতীয় 'বাণিজ্যিক' সিনেমা, ('সমান্তরাল'/'আর্ট' ফিল্ম রীতির থেকে 'বাণিজ্যিক' ভিন্নতা মোটামুটি বুঝি এটা ধরে নিলে) আসলে একটি সমন্বয় - একাধিক নাচ-গান সিকোয়েন্স, গল্প, যুদ্ধ/প্রতিহিংসা, মেলোড্রামা এবং তারকা । ফিল্মের সাফল্য এইসব একাধিক 'চাক্ষুষ (এবং শ্রবণেন্দ্রিয় সংক্রান্ত) আনন্দ'-এর কারনেই, কোনো একটির উপর নির্ভর করে নয় । পশ্চিমী দর্শকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য 'ক্লাসিকাল ভয়ার দৃষ্টি' বা 'গেজ' (gaze) তাই ভারতীয় দর্শকের ক্ষেত্রে বেমানান কারন তাঁর 'দৃষ্টি' বিভিন্ন উপ-কনটেক্সট দ্বারা ক্রমাগত ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হতে হতে সাবভার্টেড হয় । তাই, ভারতীয় বাণিজ্যিক মূলধারার সিনেমা 'বাস্তবতা' থেকে ভিন্ন 'গীতিনাটক', এর মেলোড্রামায় নিহিত আছে এক অবাস্তব ইচ্ছা-সিদ্ধি - যা দর্শক জানেন আর সেটা জেনেই তিনি ছবিটির কাছে নিজেকে সমর্পন করেন।
আন্তর্জাতিক স্তরে ফিল্ম পণ্ডিতদের একাংশ অনেকদিন ধরেই হলিউডি ছবির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তুলে ধরতে চেয়েছেন 'জাতীয়' ছবি কে । হলিউডের স্টুডিও সিস্টেম যা তাদের সাফল্যের বড় উদাহরন , তাকে নস্যাত করে জাতীয় ছবির প্রয়োজন থেকেই জন্ম নেয় নুভেল ভাগ থেকে আরম্ভ করে আরও অনেক সিনেমা আন্দোলনের । আর এই যুদ্ধের মূল চালিকা ছিল সিনেমা একটি 'শিল্প' মাধ্যম নাকি শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক পণ্য যাকে খুচরো সুপারমলে কিনতে পাওয়া যাবে পকেটে পয়সা থাকলেই - এই আপাত দ্বন্দ।  বিশ্ব চলচ্চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে  সাংস্কৃতিক নির্দিষ্টতার প্যারাডিমে যেকোনো দেশের চলচ্চিত্রেই 'জাতীয়' র পাশেই অবস্থিত আছে একাধিক 'স্থানীয়' ধারা।  অর্থাত হলিউড কে ধরলে এই হায়ারার্কি অনেকটা হলিউড -> জাতীয় ছবি -> স্থানীয় ছবি।  ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যা আরো জটিল কারন এই স্থানিক ধারার সংখ্যা সাধারন ভাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশী। ভারত তার বৈচিত্র্য সঙ্গে নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম সিনেমা উৎপাদনকরি দেশ - ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের বিবিধতায় একটি 'জাতীয়' সিনেমা সংজ্ঞায়িত করা প্রকৃতপক্ষে একটি চ্যালেঞ্জ । আর সেই সমস্যা বেড়ে যায় যখন মিডিয়ার একটা বড় অংশ এবং অনেকক্ষেত্রে সরকারী প্রচারেও 'ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্রের' হিসাবে হিন্দি 'বলিউড' সিনেমা চিহ্নিত করার একটা অসুস্থ প্রয়াস দেখা যায় । দক্ষিণ মূলধারার ছবির রাজস্ব বলিউড ছায়াছবির তুলনীয় আর সেই যুক্তিতে 'জাতীয় সিনেমা' র তকমা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ওপরেও অর্পিত হতে পারত । আরেকটু গভীরে গেলে বোঝা যাবে এই নিয়ন্ত্রন আসছে এক সরকারী অনুশাসন থেকে যেখানে দিল্লির রাজনৈতিক পরিমন্ডল চালিত হয় মূলত উত্তর ও মধ্য ভারতের হিন্দি-ভাষী প্রতিনিধিদের দ্বারা ।
দক্ষিণ (তামিল, তেলেগু, কন্নড় এবং মালয়ালি) জনপ্রিয় মূলধারার সিনেমা, পশ্চিম (মারাঠী এবং গুজরাটি সিনেমা) এবং পূর্ব (বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া) আইনসঙ্গতভাবে 'ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্রের' আওতায় বলিউডের সঙ্গে এরাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে । আর এই 'মূলধারার বাণিজ্যিক' ছবির পাশে এখন ও সক্রিয়  'বিকল্প' ছবি (যদিও বলিউডের ছবিতে এই দুই ধারার পার্থক্য ক্রমশ কমে আসছে) । এই ভিন্নতার কারনেই ভারতীয় সিনেমার কমন ডিক্সন অফ এক্সপ্রেসন জটিল - আমাদের 'ভারতবর্ষ '-এর ভিতরেই লুকিয়ে আছে আরো অনেক গুলো দেশ, এবং সেই বিভিন্নতা ভৌগলিক, সামাজিক, ভাষাগত এবং অর্থনৈতিক । এখানে স্বীকার করা যেতে পারে যে এই কমন ভিউয়ার একস্পিরিয়েনস অনেকটাই আসে হিন্দি ছবি তে - হিন্দি ভাষার সার্বিক গম্যতার কারনে , 'জাতীয়' স্টারদের নিয়োগে, সাধারন ভারতীয় সেন্টিমেন্ট মেনে বিদেশের অথবা দেশাত্মবাদী পটভূমিকায় এবং সর্বপরি এক রোম্যান্টিক আবহে যার জাঁক-জমক অনেকক্ষেত্রেই আঞ্চলিক সনাক্তকরনকে ইচ্ছাকৃত ভাবে সরিয়ে রাখতে সফল হয় ।
দুর্ভাগ্য-বশত:, আমাদের দেশের গরিষ্ঠ সংস্কৃতি গবেষণায় তত্ত্ব আধিক্য সমৃদ্ধিশালী পশ্চিমের নান্দনিক মান দ্বারা প্রভাবিত এবং পরিচালিত হয়েছে । ফিল্ম-আন্দোলনের প্রারম্ভ থেকেই ভারতবর্ষে চলচ্চিত্র সমালোচক মূলত পশ্চিমী ধ্যান-ধারনা কে আত্মীকরণের চেষ্টায় ব্রতী থেকেছে, পাশ্চাত্য তত্ত্ব দ্বারা 'আলোকপ্রাপ্ত' হওয়াকেই শ্রেয় মনে করেছে । এর ফলে বিদেশী তত্ত্বকে দেশী সংস্কৃতিতে মেলাতে গিয়ে বিফল হওয়া মাত্রেই দেশ-জাত সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা ঘনীভূত হয়েছে । এই বোধ (কিংবা বোধ-হীনতা) থেকেই জন্ম নেয় এই মতবাদ যে 'জনপ্রিয়' মাত্রেই 'অসংস্কৃত' । এর ফলে বানিজ্যিক ধারার ছবির কুটোটিও নাড়া যায়নি কিন্তু । বরঞ্চ ,ভারতীয় উপ-মহাদেশকে সুবৃহত সম্ভাব্য বাজার হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলো হঠাত ভারতীয় বানিজ্যিক ছবি এবং জনপ্রিয় তারকাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠেছে ।
আমাদের দেশের চলচ্চিত্র চর্চা তাহলে কোন সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে? প্রয়োজন স্ব-বিশ্বাস, নিজের সংস্কৃতির প্রতি আস্থা এবং নিজেদের বিভিন্নতা কে মর্যাদা দেওয়া ।এইটা বাস্তব যে প্রেমের দৃশ্যে রাস্তায় একশ জন মানুষ নাচ করে প্রেম নিবেদন করেন না যেমন অধিকাংশ ভারতীয় বানিজ্যিক ছবিতে দেখা যায় , ঠিক যেভাবে হলিউডি 'অবতার' ও কোন পার্থিব বাস্তবতা নয় এবং 'স্পিড' কিম্বা তার সিকোয়েলগুলো ও নয় । কিন্তু মাথায় রাখার সময় এসেছে যে শুধুমাত্র 'বাস্তবতা'র দোহাই সিনেমায় অপ্রাসঙ্গিক - সিনেমা ফ্যান্টাসি, সিনেমা স্বপ্ন, সিনেমা বাস্তবের 'বিভ্রম', বাস্তব নয়, আর সেকারনেই তার প্রধান উদ্দেশ্য শব্দটির সব সম্ভব কনোটেশন নিয়েই  'মনোরঞ্জন' । তাই ভারতীয় সিনেমার চর্চা ভারতীয় সিনেমাকে ধরেই করতে হবে, বিদেশী, ধার করা তত্ত্বের নিরিখে নয় - গর্ব ও নিষ্ঠা দিয়ে। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র দার্শনিক গাস্ত রোবের্জ ভারতীয় চলচ্চিত্র থিওরির প্রসঙ্গে স্পষ্ট বলেছেন -“We need a fresh film theory. It is only when we shall define the popular cinema, not in terms of what we would like it to be but in terms of what it actually is, that we shall be able to discern the good from the bad among the popular films…What we need now most urgently is a new theory – or if you wish a new vision”.
শাস্ত্রীয় পশ্চিমী চলচ্চিত্র তত্ত্বের আদিম ফোকাস 'gaze' এবং 'spectatorship' ধারণায় ।এর সঙ্গে যুক্ত হয় লিঙ্গ-ধারনা এবং জন্ম নেয় 'ভয়ার' তত্ত্ব । ভারতীয় প্রেক্ষাপটে নারী শরীরের পাবলিক এক্সপোজার পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে ভিন্ন (গ্রামীণ ভারতে যেমন স্নানরতা নারী কোন ভয়ার বিষয় নয় , তা পরিপ্রেক্ষিতে সাধারন ঘটনা মাত্র)। তাই ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিনির্মানে প্রয়োজন মাটির শিকড় থেকে তাদের বিশ্লেষণ, কয়েক সাধারণ, গ্রাহ্য কাঠামো তৈরি করে নিয়ে । সেই কাঠামো দিয়ে সব আঙ্গিকের ভারতীয় ছবি বিশ্লেষিত না হতে পারে - কিন্তু আরম্ভটা শুরু হওয়া দরকার - কাঠামোকে সময়ের সঙ্গে উন্নত করে যাওয়া, প্রয়োজনে নতুন কাঠামো তৈরী করা সেই মনোভাব নিয়েই ।পাশ্চাত্য তত্ত্ব আলোকে ভারতীয় সিনেমা চর্চা আমাদের ক্রমান্বয়ে সংশয়ী করে তুলেছে, আমরা ভাবতে বাধ্য হয়েছি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় নিকৃষ্ট । এই নতুন দৃষ্টি বিকাশ একটি কঠিন বিষয়, এবং সেই কাজে এগিয়ে আসতে হবে - ফিল্ম সমালোচক, ফিল্ম পরিচালক, ফিল্ম টেকনিশিয়্ন, ফিল্ম প্রযোজক এবং ফিল্ম দর্শক - সবাইকেই ।

The cinema of Buddhadeb Dasgupta



[Published in Deep Focus Cinema, Sept - Nov 2014 Issue (Vol II - Issue III)

Buddhadeb Dasgupta is an Indian film-maker who had left his mark on the international scene with his first feature film Dooratwa way back in 1978. Since then with more than 15 feature films to his credit (and almost equal number of documentaries), Buddhadeb has garnered his place in the history of Indian cinema. As far as National awards and international recognition is concerned, he is probably second to the towering Satyajit Ray whose narrative style Dasgupta have consciously abandoned in lieu of a more surreal, poetic vision of the moving images. On the occasion of his 70th birthday in 2014, Federation of Film Societies of India, Kolkata chapter has published a collection of articles on and by Dasgupta in commemoration – The Poet of Celluloid.
The book is divided into five sections viz. ‘Discourse’ (analytical writings on his cinema and the prevalent motifs and visuals), ‘Dialogue’(Interviews), ‘First Person’ (articles by Buddhadeb Dasgupta), ‘Critique’ (Review of his feature films) and finally ‘Dossier’ for information about his various creative output.
Buddhadeb started off his journey with the examination of complex inter- and extra-personal psychology in the face of chaos and despair in his "humanist" trilogy—Dooratwa (Distance, 1978), Grihayuddha (Crossroads, 1982), and Andhi Gali (Cul-de-Sac, 1984). The next decade (1988-1998) led him to poignantly depict the crisis engulfing the creativity of an artist, his dilemma of compromise, integrity, and non-communication in the stylistic films of this era: Fera (The Return, 1988), Bagh Bahdur (Tiger Man, 1989), Charachar (The Shelter of Wings, 1993). With the Special Director's award for Uttara (2000) at the Venice Film Festival, his third decade in filmmaking commenced. Generally, the central theme of the early films of Dagupta has always been "waiting"—for food in Neem Annapurna (Bitter Morsel), or for the lover, for revolt, for dreams, and for the coming into existence of primitive art forms. In all of Dasgupta's films of the first decade, long narrow lanes populated by solitary figures were used as a motif signifying the stifling world in which we live. His next decade of films dealt with the loneliness of human beings in the magnificent mise-en-scene of the picturesque landscapes, coping with the staggering melange of human psychology—memory, alienation, disillusionment, obsessions, perceptions, insecurities, and dreams. The other motif that appears repeatedly in almost all of Dasgupta's films and mesmerizes us with its intrinsic power to communicate are ‘doors’. The half-closed door in Fera symbolizes the ignorance of a child towards the relationship between his mother and the central character. In Charachar, the fully open door brings new hope to the bird catcher, after the door leading to his wife finally closed itself to him. And in Lal Darja, the child could open a number of doors with his magic chant, something that he failed to open upon growing up. In a postmodern reading, Dasgupta's films shift their centers and bring a sense of an inevitable, impending doom emerging from the curse called "modern India" whose indigenous culture is mutilated and subjugated by a false sense of Western dependency.
In the ‘Discourse’ section Gowri Ramnarayan’s article ‘Verses in Celluloid: Buddhadeb Dasgupta and his works’ deserve special mention for being a good read and putting forth an analytical take on Dasgupta’s early films till the article was written in 1993. Equally thought-provoking is John W Hood’s ‘The Poet as Filmmaker’ where the writer draws the essential nuances and the differences between poetry and cinema and how often interchangeably we misuse the two. Hood elaborates the ‘salient poetical features of Buddhadeb’s films’ – “…as in poetry, the best images are effected with an economy of language; the presentation of image and idea must bear meticulous attention to the proper relationship with form; and the piece must have a clear integrity which accommodates the emotions as much as the mind…But we should also consider in this context the substance of his cinema, its values and predominant ideas, which are more akin to the interest of a poet than, say, a social realist”. Another interesting observation in the same article draws in the inevitability of a Ray legacy – “A major aspect of the legacy of Satyajit Ray is the importance of narrative and the facilitation of empathy with its setting, something basic to all of Ray’s films. And as long as Ray is held in an almost universal esteem bordering on hagiography, his way of making films is held by many to be the model for good cinema. This is not being critical of Ray; it is merely to give an example of another kind of cinema, a distinction which many cinema viewers and critics throughout the world are slow to recognize”. However from Swapner Din (Chased by Dreams, 2004) probably there is a lull in the interest within and outside on Dasgupta’s films. It is no wonder hence that the ‘Discourse’ section deals with critical essays on the director’s oeuvre which doesn’t touch upon any of his recent films made in the last 10 years or so. One reason may be because most of the articles were written quite sometime back. The collection could have taken the task to reflect on Dasgupta’s entire gamut by having critical essays on his films till date – the patterns, deviations and the paths lost in oblivion. That extra duty in a commemorative collection is unfortunately missed sorely and probably that is why there is no article which dealt with a plethora of documentary films which Dasgupta made as well. In today’s world of cinema where Documentary is slowly becoming a very important parallel to the so-called feature films this omission which probably not intentional and largely out of ignorance is not going to miss the eye. Critical questions as to why Buddhadeb has not made almost any Documentary since 2004 could have been raised here to understand the state of the creator’s mind and the inclination of his future creative pursuits.
Aruna Vasudev and Geeti Sen’s interviews are intriguing, dealing again with the early aspects of Buddhadeb’s works. Geeti Sen’s in particular has the interesting reference of the Films Division documentary of Dasgupta – The painter of eloquent silence on the legendary painter Ganesh Pyne.  Dasgupta’s vision towards other arts and the visual image as well as the interchanges between them is evident there. However the same interview is plagued with a basic problem where at several places the interviewer talks more than the interviewee, thereby failing to elicit insightful views from the director. Vishal Verma’s recent interview is important since it gives an aspect of Dasgupta’s philosophy of making the Indian cinema popular in the Western festival circuits as he rightly laments – “Biggest problem with Indian cinema is that it has never become a brand like Chinese cinema, Iranian cinema or lately Korean cinema. Indians were never been able to brand their films like them. Independent makers like Ray, Ghatak they attracted the audience”.
Dasgupta’s own philosophy on life and art which is replicated in the interviews also makes an engaging read in his own essays viz. ‘Enduring Images’ and ‘The world is our stage’. The ‘Critique’ section is pithy – Dhruba Gupta’s take on Grihayuddha, Gaston Roberge’s on Uttara and Amit Agarwal’s parallel between Neem Annapurna and Satyajit Ray’s Pather Panchali deserve special mention.
This is a book which is produced by the Films Division – the supposed nurturer of ‘good’ cinema in India. That they have taken pain to bring out this book deserves applause. However, the collection is based on originally published articles elsewhere – so the pain if any in bringing out this collection is in gathering the articles from different sources. The editorial team could have given notice in making the production of International standards. There are no stills from the different films, the Dossier is incomplete with respect to the details of the films (only the names and year cease to be enough in today’s information-intensive world) which Dasgupta has made, the quality of printing and the quality of paper all deserve a hike and not the least the shape and the size of the book on a ‘different’ film-maker is too clichéd. The collection could have been a product that can be marketed to the world – a book on a film director whom the editor feels dons world standards. Keeping the price of the book low at 150 INR/5 USD and then catering a sub-standard production belittles the cause. This is probably not just a minor blemish but reflects the vision of the producers of the book, who unfortunately don’t hold the same ‘poetic’ vision of the subject they dealt with here.

Saturday, May 24, 2014

Ray-manic



Let’s play a game, try to identify the films mentioned below from the descriptions associated with each -
Film 1 (2009) advertised that this was the first film after Satyajit Ray’s Aranyer Din Ratri where Aparna Sen and Sharmila Tagore acted together. It further went that even the Ray masterpiece didn’t have the two pitted against each other in the same frame as this film did.
Film 2 (2003) took three of the four characters of Aranyer Din Ratri to the forest of Dooars on a sequel train at a time when the DVD, CD version of the Ray original was not readily available all over the place.
Film 3 (2013) flaunts that all the characters of the film are having names same as the different major Ray characters in the master’s film oeuvre.
Film 4 (2012) uses Ray’s Charulata in the title and tries to depict a ‘contemporary’ Charu in showing her as a sex-starved siren.
Film 5 (2012) has the same director of Film 4 using the name (but in a different font) which Ray used for a triplet he directed as a tribute to Rabindranath Tagore on the latter’s 100th Birth Anniversary in 1961.
Film 6 (2010) by Bengal’s most celebrated director after the towering Ray actually depicts an alleged love-story between Ray and his actress muse – fictionalized but the references are hard to miss.
Film 7 (2010) by a debutant director draws frame-wise parallel between Ray’s Uttam Kumar starrer Nayak and a film-within remake of it.
Film 8 (2008) by an actor-turned singer-turned director again used Aranyer Din Ratri’s four characters to a trip to the mountains as the members of a travel agency with repeated reference to the Ray’s masterpiece in the form of game playing or conscience bursting!
Film 9 (2013) took Satyajit Ray’s Kapurush o Mahapurush and slyly just interchanged the order in the title.
Apart from these there are innumerable Feluda movies during this last 10 years as well to make the idle mind reminisce a popular Ray creation, try to savour, retort to comparisons, get disappointed and wait for the next one!
As the statistics show, using Ray’s work as blatantly as making the comparisons physically and visibly correlating is what many of the Bengali directors have decided to practice. There may be an element of disrespect towards the audience’s intellect, may be an ignorance, or it can be a ploy to make the films easily communicable to the audience they wish to cater. In the effort, a sizeable younger generation (apart from the film school students) has steadily and surely moved away from these films and unfortunately from some differently refreshing contemporary Bangla films as well.
This question of using film references of Ray (or any other film) is a tricky question as well – cause the tenets of inter-textuality somewhat lose relevance here. Tagore for example is used and re-used much more than Ray – as background songs, in recitals, as the narrative of films and so on. Yet in those cases we try to gauge how well the original has been ‘transcreated’ in the ‘different’ medium of cinema. That is how we have argued that Charulata is indeed an artistic rendition of Tagore’s inciting Nashta-Neer. However if the medium is same we are less lenient, in fiction we raise the issues of plagiarism, in cinema we use soft focus in a sepia feeling of ‘nostalgia’.
It is no wonder hence that Koushik Ganguly’s Apur Panchali (2014) with such a title will dwell on the flashback anthem to cater to a nostalgia-starved population. The film’s packaging is ideal for such a treat. It starts off with gaiety – a search for Subir Banerjee, the actor in Satyajit Ray’s Pather Panchali who played the child Apu. Apu as a character is important in Indian cinema – the different stages of him in the 3 films which Ray had made, together termed as The Apu trilogy. Koushik’s film drew heavily from The Apu trilogy, using footage at will and at random, making the common sensitive audience go gaga over it. It is time to ponder whether their marked ebullience is due to the new film or in reminiscing and recollecting Ray’s masterpieces. The story line of the new film works on three planes actually – at one level we find an aged Subir representing the contemporary times who is in communication with a Film institute student regarding an award bestowed upon him from Germany for his role of Apu. The other level in black and white deals with Subir’s recollections of his life in the form of a disjointed sequence of flashbacks. The sequences are craftily picked up in a way so that the Ray films’ footages can be used. The third level is actually the Ray footages which ornaments the film but in a sense becomes more important than the film in question.
As mentioned earlier, in order to commemorate Ray’s trilogy, the sequences of Subir’s life in the flashbacks are handpicked. In a later sequence Subir tells how Apu’s shadow never left him and how his life seemed uncannily similar with Apu. It may come across as interesting for many to find out the whereabouts of several child artists who went into oblivion post the film which made them famous. However, in trying to draw analogy with Apu’s life and justifying it with Ray clips seems an overboard attempt. Looking at it closely, the most important highlights of Subir’s life seem to be:
  1. his father’s death
  2. death of his son during child birth
  3. suicide of his wife
It is only normal that a person’s parents will pass away before the person himself. So father’s death is not anything striking and unique of Subir and Apu. Apu’s son Kajal was alive unlike Subir, while Subir never had a sister like Durga (for Apu) who passed away when Apu was a child. The only resemblance so it seems is between Aparna’s death during childbirth for Apu and Asheema’s suicide for Subir. The director however was liberal in his use of motifs (which cannot be termed as similarities between the lives of the two characters in any stretch of imagination) where the Ray clips are used. It soon became a lovable game for the audience to relate the flashback situations of Apur Panchali to the Trilogy sequences which followed them:
  1. Subir putting his ear against the electric post followed by the famous Pather Panchali shot when Apu came to see a train for the first time in his life,
  2. Subir’s facial expression after his son’s death news reminiscing Apu’s in Apur Sansar after Aparna’s death
  3. Subir throwing the sacred thread in the pond followed by the scene from a similar one in Pather Panchali where Apu threw the string of beads stolen by his sister Durga,
  4. Subir’s father’s death sequence merging with Harihar’s in Aparajito (including the inimitable flight of the pigeons on the ghats of the Ganges)
  5. Married Subir’s conjugal moments interspersed with Apu’s in Apur Sansar
Apur Panchali ends with imagery of the river and the boat which came back multiple times in Apur Sansar. Whereas in the latter the ending had the flowing river in parallel to Apu’s flight indicating a flow in his life which was missing probably, Subir’s course of walk is also in parallel but away from the camera. Thankfully, in this case atleast Apur Sansar’s footage was not used as a comparing shot.
Jean-Luc Godard once famously said “It’s not where you take things from—it’s where you take them to.” Apur Panchali, like many other films listed in the beginning of this article have tried in varying capacities, spans the fabric of nostalgia deliberately using Satyajit Ray’s cinema in the most direct way. Few of them, individually may appear as an entertaining view like Apur Panchali and hence deserving some praise however what really is of concern is where does these references and correlations leading the Bengali cinema to. To this critic they don’t lead us to anywhere worthy of mention. Quite simply, a day will come when the Ray references will be exhausted, and then there will be repetitive references till the audience gets tired of the ‘subtle’, ‘nuanced’, ‘poetic’ merging of footages from Ray classics into a vacuous narrative of the recent films. The Bengali director needs to ride the tide to remain honest with his/her audience. For this alone, in spite of a few repetitive misgivings Koushik’s Shabdo will remain as a major film of his ahead of Apur Panchali.

Saturday, May 17, 2014

The ‘choice’ of the filmic woman



In Indian and world culture in general (like in real life as well unarguably) and films in particular it is the representation of the male protagonist that holds sway till now. There have been debates based on statistical percentage of the number of films having a female protagonist which generally is no more than a quarter of the number otherwise. In a sense the male central character, the male supporting roles, the ‘male’ script writer and the ‘male’ director (‘male’ here is a state while male is a biological form) represent the power inherent. Hence any film with a female protagonist is looked upon as a remarkable particular incident whereas the ‘male’ representations are all ‘normal’ cause they represent the ‘whole’. This utter skew in a way colonises the definition of the ‘normal’ in the context of the film culture and re-establishes its power in the psyche of the general mass who are the consumers.  Whether this skew is due to the fact that most auteur is ‘male’ or is it because most audience is ‘male’ is a subject of deeper study.
In this context hence, the ‘choice’ of the female protagonist in the handful films where they exist becomes an object of conjecture. Interestingly, two Hindi films which were released almost at the same time have female protagonists and in both the director is male – Queen by Vikas Bahl and Gulaab Gang by Soumik Sen. Whereas Queen deals with an individual girl’s flight from her own cage to a different sensibility, Gulaab Gang represents the struggle and existence of a gang of women lead by a woman leader. People have raised questions about Rani (the protagonist in Queen)- her initial timid and meek existence and her sudden fluttering to ‘enlightenment’ once she reaches foreign shores. Critics writing in English language got angry – ‘Why is it that her understanding of her self and her opening up has to happen only when she is exposed to the West?’ many of them asked. Probably just the same way we critics adorn us in a ‘phoren’ language, damn it! People probably tend to get extra judgmental when a film gets rave reviews, is liked by many (who are not ‘critics’ for that matter) and more importantly does exceedingly well in the Box Office. There are justified eyebrows to be raised on filming Queen as almost a travel channel’s know-a-destination program.  But our question is more with the ‘choice’ that Rani had with her life. She was born and raised in a conservative surrounding in Delhi where the incidents of female harassment can make the Sensex look stupid. She had limited ‘choice’ but to take her burly brother as an escort – even for a date.  Yet Rani manages to fall in love with someone, gets engaged till finally on the eve of her marriage the groom backs off. What Rani decides hence, is to go to her honeymoon alone – a decision she takes pragmatically and more importantly, singlehandedly. This is indeed a unique idea which understandably didn’t go down well with many who turn the film down based on Rani’s first independent ‘choice’.  Just like in many cases an art form appeals cause it renders a string somewhere, resonates something similar in you, there are in many occasions as well when you don’t do something yourself ever, never believe as well in a circumstance in real life but in being patient with the reel-reality try an enjoy the ‘alternate’ aspect represented therein.  Without a job, without any planning and without an iota of confidence yet the oozing kindness and the milk of love in his heart made Apu (in Satyajit Ray’s Apur Sansar) decide to marry Aparna. We may choose to debate Apu’s ‘choice’ here but our myopia is not Apu’s limitation.  There is no intention to equate the Ray masterpiece with Queen the film, it is more with the ‘choice’ that Rani has before her and what she ‘knowingly’ embarks upon instead of being thrust upon her. Interestingly, it is her grandmother who eggs Rani on, to get up and get over her life. Noteworthy is the fact that Rani has no apparent longing of ‘breaking free’ from the shackles she has apparently been tied to for so long – this is how she is and she is ‘fine’ with it. It is her dream of going to Paris on a honeymoon and her fiancé’s to Amsterdam is why she sets out.  Repetitive and at times boring from a script perspective, we are made to go on hop-on hop-off tour of Paris before Rani settles down with Vijaylakshmi, a more ‘open’ girl she meets in Paris. Where Rani probably remains endearing is that she doesn’t emulate Vijaylakshmi cause Rani feels that is not something she can make over in such a short time, and probably she never ‘want’ to. Does Rani’s conservative patriarchal upbringing make her defensive against boozing and having causal sex in the hotel rooms – it can well be.  But just in the same sense Vijaylakshmi’s plunging neckline and cigarette wielding may not be the ‘definition’ of an independent woman. The question of the representation of the ‘independent woman’ is subjective across gender and across the strata the individual belongs to. The question of ‘choice’ is more palpable – Rani understands that the choices of life for Vijaylakshmi are different from the choices she has for her. There is no stepping over to the other’s territory and that is where the notion of ‘independence’ comes. It is more about leaving than encroaching, more about creating spaces for others and preserving the same for own. That is why, to me, when Rani returns with straightened hair and goes up to her fiancé’s house to hand him the ring he gave her or when she rejects his plea to talk over their relation in Amsterdam, it is no ultimate destination of the character of Rani. It is again a choice she makes for herself, to lead her life the way she wants to, back with her family.  Will she ever marry, will she exercise the confidence to be on her ‘own’ even more to the extents of Vijaylakshmi are inappropriate musings. She discovers that like everyone she also has wings – it was she who chose not to fly with them.
Gulaab Gang (mentioned henceforth as GG) on the contrary talks about a group of women in central India who fight for justice – both domestic and local. Inspired by a real life story but fictionalized heavily to suit the popular commercial demands, GG shows how the rural central Indian patriarchal phallic norms despise, abuse and victimize women to the worst possible sense one can think of. As opposed to Rani, Rajjo the leader of the gang is entering mid-aged though the glamour of Madhuri Dixit makes her immensely attractive. A general perception about popular Hindi cinema is that the women between mid 20s to mid 30s have more or less one identity to play – that of male desire (or ‘gaze’). It is mostly the recognizable woman who is either older or younger and mostly the older woman is the one who is expected to exude ‘power’ if portrayed as ‘independent’. And in majority of such cases the strong woman is portrayed as scary, de-sexualised and loud. To the director’s credit he represented a strong woman in Rajjo without these popular markers. Whether Rajjo comes out as independent or whether her ‘choices’ in stripping things off, burning the governmental organizations, killing dishonest officials and their aides at will can be termed sensible is a different question. GG follows the typical trope of commercial hindi cinema riding on the concept of the ‘superhero’ who brings order and justice to the downtrodden by taking the reigns of justice in his (in this case ‘her’) hands. So there are no surprises that what will follow on screen is bloodbath. Along with the gender inadequacies in rural India, the director also harped on the known issues of corruption and politicking and how Rajjo tries to fight down the menace. And in doing so the director pits Sumitra Devi, the shrewd and cunning woman politician against Rajjo. As if, to demean Rajjo’s struggle, pit her against a ‘woman’ – after all the bastions of patriarchy are safeguarded. Hence the so-called ‘choice’ of Rajjo gets curbed by the ‘choice’ of the director to play to the psyche of the Indian male who in the end needs to feel less threatened and relieved.  Quite interestingly, Sumitra Devi is also in the exterior a woman with ‘substance’, a cruel, deceitful person but who can cut to size the male around her. Both Rajjo and Sumitra, like Rani, are without a male partner. The symbol of the ‘independent’ woman without a family or a ‘home’ is again a clichéd representation since that helps the director to take away few of the real life complexities.
In this regard it becomes interesting and important to understand the ‘choice’ of the average woman to be decided by the ‘female’ mind and not necessarily by the way the ‘male’ director and his audience want her to be. Because it is time to dwell and ponder whether the ‘home’ of Rajjo, Sumitra and Rani is actually in a movement beyond the constraints imposed by the society and hence a deviation from the geographical definition of a physical ‘home’. It is farcical and squarely ironic as well because the supposedly independent women will then be ‘at home’ where the ‘home’ is not a metaphor for stability and sanctity. This notion of a safe, warm enclosure as ‘home’ being a patriarchal concept can be debated but till then the ‘independent’, ‘free-willed’ Rajjo and Rani will continue to fight within the confines of the script, struggle to have them drawn with a hue that has fair enough choices in the oeuvre for them to decide.

[Originally published in The Statesman on May 10, 2014]

Monday, April 28, 2014

ঋত্বিক – একটি নদীর নাম



একটি মানসিক হাসপাতাল। নীলকন্ঠ বাগচী ও তাঁর স্ত্রী দূর্গা। এদিকে আলো ক্রমে ক্রমে কমে আসিতেছে। একজন ডাক্তার। তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন নীলকন্ঠের সমস্যা ঠিক কি? ব্যারাম কি মাথার ? না, অন্য কোন গভীর অসুখ এখন গভীরতর। গান ভেসে আসে

আমের তলায় ঝামুর ঝুমুর কলাতলায় বিয়া
আইলেন গো সোন্দরীর জামাই মুকুট মাথায় দিয়া

তিনি জঙ্গলের মধ্যে শুয়ে পড়লেন। পিঠে বন্দুকের বুলেট। ছেলের প্রভাত-সূর্যের রশ্মি-স্নাত মুখ দেখবেন এখন ইচ্ছে ছিল তাঁর। হল না। এরা তাঁর সোনার টুকরো ছেলে সব। এদের আত্মত্যাগের ইতিহাস, ভালবাসার অঙ্গীকার নিয়ে তিনি সন্দিহান হননি কদাপি। এক দমকে ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে ঢুকে পড়েন রবীন্দ্রনাথ – “আমার অঙ্গে অঙ্গে কে”… প্রায় লং শটে দেখা যায়। যে কথাগুলো বলানো হচ্ছে নীলকন্ঠের মুখ দিয়ে সেকথাগুলো আর কেউ ওভাবে বলতে পারত না, কোনদিন।

কম্যুনিস্ট পার্টিতে ঢোকা, বেরনো, সেদিনের বাংলাদেশ, ৭০-এর দশকের শুরুর বঙ্গভূমি

।। ঋত্বিক কুমার ঘটক ।।
আলো আরোই কমিয়া আসিল।

বিমলের মা ছিল জগদ্দল। তাই অমন মাতৃহারা কান্না। জগদ্দলকে বাঁচানো যেত না ঋত্বিক যদি ওয়াহিদাকে পাওয়া যেত ? কিন্তু সে তো আরো বেশ কয়বছর পর। ততদিনে প্রথম ছবি রিলিজ করেনি। দ্বিতীয় ছবি চলেইনি। মানুষ আর যন্ত্রের ভালোবাসাটা আমরা কেউ বুঝতেই পারলাম না ! ঋত্বিক যদি কালী ব্যানার্জির জায়গায় উত্তমকুমারকে নিতেন !

একের ভিতর ঢুকে পড়ছে অন্য – “সুবর্ণরেখার মৃত্যুকল্প, বাগদীবউ, তিতাসের জলোচ্ছ্বাস, নাম রেখেছি কোমল গান্ধার। নীতা বাঁচতে চেয়েও পারল না। তবু সে অতিক্রম করে সূদূর নীহারিকা।

সুরমা দেবী ছেড়ে গেলেন ঋত্বিককে, নীলকন্ঠকে। এরপর ফিরেও এলেন, সেবাও করলেন। ঋত্বিক এরপরেও অসুস্থ, আবার সুস্থতা। ফিল্ম ইন্সটিটিউটে চাকরি, ছাত্রদের ভালবাসা। তারপর ইন্দিরা গান্ধীর ওপর তথ্যচিত্র ! অথচ কংগ্রেসের ভূমিকা, নেহরুর বোলচাল নিয়ে বিষোদ্গার ক্ষমা করবেন ঋত্বিক। কিংবা অসংখ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া ছবি, পয়সার বন্টনে টেকনিশিয়ানদের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি। আবারও ক্ষমা করবেন।

কমলবাবু এড়িয়ে গিয়েছেন। ভেবেছেন এক স্তব-স্তুতিতে মোড়া মানুষের নাম হল ঋত্বিক কুমার ঘটক।

ঋত্বিক একজন মানুষ ছিলেন তো ? ফ্রেইলটি নিয়েও। কমলবাবুর ছবিতে শুধুই অ্যাসাইলাম, মদ, পাগলামো। যে সময় বেছে নিয়েছেন পরিচালক, তাতে করেও উদ্ধার পাবেন না। এসবের শেষেও আছে দুটো ছবি, একাধিক নাটক। শুধুই মদ্যপান ও হতাশাকে সঙ্গী করে ? তাতে অবিশ্যি মধ্যমেধার বাঙালী সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেওয়াই চলে, আর্ট হয়ে ওঠা যায় না। কমলবাবু, আপনি ঋত্বিকের ভালবাসা দেখতে পেলেন না ? যে ভালবাসায় সব কে অগ্রাহ্য করেও কেন চেয়ে আছ গো মাগেয়ে ওঠা যায়। যে ভালবাসায় তেভাগা থেকে নকশাল আন্দোলন অ্যানালাইজ করেও বলা যায় – “আমি পিপলস্‌ আর্টিস্ট কোমল গান্ধারফ্লপ, ‘সুবর্ণরেখাও। কিন্তু তার পরেও থেমে থাকেনি তাঁর স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ। করেছেন তথ্যচিত্রও, ইচ্ছেতে বা টাকার জন্য। শুধুই ভবা পাগলাকিংবা ক্ষ্যাপা’ – এই ছাঁচে ফেলে দিলে সেই তিমিরেই থেকে যাব যেখানে ঋত্বিকের অনেক অবিমৃষ্যকারী মন্তব্যকেই ওঁর প্রধান বক্তব্য বলে ভ্রম করা হয়।

রামকিঙ্করের ওপর তথ্যচিত্র যেন রামকিঙ্করের ভাস্কর্য। কমলবাবু, আপনার ছবিতে রামকিঙ্কর এলেন না কেন সঠিক অভিনেতা পাওয়া যেত না? সেই ফ্রেম যা ভাস্কর্যের মতোই বোল্ড, বিবেকী, বাঙ্ময়। ঠিক অনেকটা রায়মশাইয়ের ইনার আইছবিতে বিনোদবিহারীর পেন্টিং-এর মতো ফ্লুইডিটি যার সর্বাঙ্গে। এবং জর্জ বিশ্বাস। শুধুমাত্র গণনাট্যের বন্ধু হিসেবে নয়, জর্জ বিশ্বাসের গান না থাকলে দুয়ার ভেঙে পড়তই না ঝড়ে।

ঘরে ফেরার পালায় সবার ঘরে ফেরা হয় না। ঘর হারিয়ে যায়, পালটে যায়। তবু সবাই অনির্নিমেষ চেষ্টা করি মা, মৃত্যু, ভালবাসা। মোদের কোনো দ্যাশ নাই” – সুস্থিতি তাঁর উজ্জ্বলতর দিক না হলেও সুস্থ, স্বাভাবিক ভালবাসা নিয়ে ঋত্বিক কাটিয়ে দেন অনেক বছরই। ডিটেলড্‌ স্ক্রিপ্ট, ইন্ডেক্স করা পরিপাটি।

পরের ছবি নিয়ে কি ভাবলেন ? (প্রবীর সেন কর্তৃক সাক্ষাৎকার, ১৯৭৫)

নবদ্বীপের পাশের কোন একটি মেয়ে, তার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া। তাকে পাড়ার ওই ওয়াগান ব্রেকার্সযারা সব নয়া কংগ্রেস হয়েছেনপাইপ গান ইত্যাদিতারা চেজ করতে আরম্ভ করে। মেয়েটার দোষের মধ্যে দোষ যে সে গরীব এক বামুনের মেয়ে, কাজেই এই গ্রাম ছেড়ে যাবার উপায় নেই। দ্বিতীয় কথা সে দেখতে সুন্দরী। এই ছোঁড়াগুলো পেছনে লেগেছে তো আলটিমেটলি মেয়েটা এই ছোঁড়াগুলো চেজ করতে করতে মেয়েটাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেল যে মেয়েটা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, আমি একটা ভাল শাড়ি পরে আসিভেতরে ঢুকে সে পেছনের ঘর দিয়ে বেরনোর চেষ্টা করেছিলতারপর এই ছোঁড়ারা ধরে অ্যান্ড দে এনজয়ড হার। পর পর চার পাঁচটা ছেলে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে এরি মধ্যে সত্যযুগ’-এর রিপোর্টার ছেলেটা সে এই গ্রামেরই ছেলে সে গিয়ে পৌঁছেছে। সে শুনেএরা আগুন লাগিয়ে, মেয়েটা কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে মারে। এটার ভিত্তিতে আমি একটা ছবি করব।

আজকের ২০১৩তে দাঁড়িয়েও এই গল্প একটুও বেমানান লাগে কি? তখনই, সেই মধ্য ৭০এ ফ্রেমের বাঁদিক থেকে ধোঁয়া উঠিয়ে ছুটে আসে মরুভূমির ট্রেন গুমগুম গুমগুম শব্দ আর সত্যজিতীয় মিউজিক। ক্যামেল রেস দেখতে থাকি আমরা, আত্মবিস্মৃত, বুভুক্ষু প্রায় হলিউডি ওয়েস্টার্ণ।

আমি শুধু এটুকু বলতে চাই যে, আমাদের ঐতিহ্যের মধ্যে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে আমরা যদি আবার অনুপ্রবেশ না করি তাহলে কোন জাতীয় শিল্পই গড়ে উঠতে পারে না। ছবি তো নয়ই।

ঋত্বিক একটি ভুল পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিলেন। না হলে দেশভাগের ব্যথার সঙ্গে তেভাগার কান্না, মন্বন্তর ঘুরে নকশাল আন্দোলনের ব্যর্থতার বিষ তিনি কন্ঠে ধারণ করেন কেন?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ভাল অভিনেতা, পরিশ্রমীও, কিন্তু অমন নাদুস ভুঁড়ি নিয়ে নীলকন্ঠ ! কেউ বলল, “ওতো ঋত্বিক নয়, ও নীলকন্ঠ!সঠিক যুক্তি, তবে ওইটুকু বুদ্ধি থাকা দরকার যে ঋত্বিকের অনেকটাই নীলকন্ঠের মধ্যে থাকলেও অনেকটাই নেইও। নীলকন্ঠ, আফটার অল, একটা ফিকশনাল চরিত্র। তবু ঋত্বিকদের চরিত্রের কিছু টিপিক্যাল ম্যানারিজমের জন্য যুক্তি, তক্কো আর গপ্পোর নীলকন্ঠকে ভাল করে অবজার্ভ করতে হয়, সেটা রেফারেন্স হিসেবে কিয়ৎ কাজ করতে পারে কিন্তু সেটাই সম্পূর্ণতা নয়। কখনোই। কমলবাবু, ‘যুক্তি…’ তে ঋত্বিক নিজেকে নিয়ে হেসেছেন, বিদ্রূপ করেছেন, তার নেপথ্যে মিথ এবং সত্য মিশে যেতে থাকে। ঋত্বিকের অন্তরকে বুঝতে বারবার অ্যানালাইজ করতে হবে তাঁর ছবিকে (তাঁর কথাতেই – “ঐতিহ্যের মধ্যে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে”), তাঁর লেখাকে, তাঁর সম্বন্ধে সমসাময়িকদের লেখাকেও পরমহংসের মতো করে।

খারাপ লাগে ভাবতে মৃত্যুর প্রায় চার দশক পরেও ঋত্বিকের কাজকে মূল্যায়ণ করার প্রচেষ্টা নিয়ে কী অনীহা। এখনও সেই সরলীকরণ, সেই আলগা ছুঁড়ে দেয়া চটকদার মন্তব্য। শুধুমাত্র সিনেমাটোগ্রাফির কারুকাজ দিয়ে, সাদা-কালোর দ্যোতনায় ফিল্ম ভাল হয়ে যায় না, ভাল হয়নি, হওয়ার কথা ছিল কি কোনদিন? কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, আপনার ছবিটি ঋত্বিক কুমার ঘটককে নিয়ে একটি অপপ্রচার কারণ, ঋত্বিক কোন মেঘে ঢাকা তারা নন, ঋত্বিক একটি নদীর নাম। ক্ষমা করবেন।।

(প্রথম প্রকাশ - http://bookpocket.net/archives/lekha/ritwik-ekti-nodir-naam)